সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমাদের মননের ইতিবাচক বোধোদয় আর কতদূর? [ Part – ২) # ১১৬

আমাদের মননের ইতিবাচক বোধোদয় আর কতদূর? [ Part – 2) 
আমাদের ক্যালেন্ডারে ছুটির অভাব নেই। খৃস্টানদের বড়দিন বা বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান বুদ্ধপূর্ণিমা মুসলমানরা পালন না করলেও, বাধ্যতামূলকভাবে মুসলমানদেরও বর্ণিত ছুটি কাটাতে হয় কোন কাজ না করেই। হিন্দুদের নানাবিধ পূজার পরও শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি বা জন্মাষ্টমীও মুসলমানদের ভোগ করতে হয় রাষ্ট্রীয় আদেশে। আবার অন্য ধর্মাবলম্বীদের পালন করতে হয়ে মুসলমানদের জুমাতুল বিদা দিবসটি। এতো ধর্মীয় ছুটি বিশ্বের আর কোন রাষ্ট্রের ক্যালেন্ডারে খুঁজে পাইনি। তারপরও লক্ষ লক্ষ মামলাজট, ফাইলজট সত্বেও সকল অফিস আদালত সপ্তাহে ছুটি ২-দিন। ১দিন ছুটি করলে কি জাতি উপকৃত হয় না? এ জাতিকে কর্ম উদ্দীপনা ও আর সজাগ করার দায়িত্ব কার? দেশের জন্যে কল্যাণহীন কিংবা ক্ষতিকর প্রচলিত ব্যবস্থা চলতে দেয়ার মধ্যে কি কোন বাহাদুরী আছে? স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সপ্তাহে ৬ দিন চলতে পারলে, সরকারি দপ্তরগুলো কেন ৫দিন চলবে?সাম্প্রতিক একটি জনপ্রিয় দৈনিকের খবর, সিটি কর্পোরেশন ১০ হাজার লিটার মশার ঔষধ কিনেছে এ্যাগ্রো প্রডাক্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৪৫ টাকা প্রতি লিটার হিসেবে, যাতে কোন মশা মরে না পানি মিশ্রিত ভেজাল বলে। যদিও এসিআই তাদের খাঁটি এডাল্টিসাইড নামক মশার ঔধষ খোলা বাজারে বিক্রি করছে লিটার প্রতি ১৯৫ টাকা দরে, যাতে মশাও মরে ঠিকমত। মন্তব্য রেখে দিলাম পাঠকের জন্যে !!!!!!!
 
সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে শহরের ময়লা দ্রুত সরিয়ে নিয়ে শহরবাসীকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে দেয়া। কিন্তু ঢাকার প্রায় স্থানেই বিশেষ করে উত্তর বাড্ডার প্রগতি সরণিতে প্রধান সড়কের ফুটপাত ও রাস্তায় ৬-৭টি ময়লা সংরক্ষণের কন্টিনার রেখে পুরো ফুটপাত ও রাস্তার অর্ধেক দখল করে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করা ছাড়াও, নানাস্থান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা এনে প্রধান সড়কে ডাম্প করে রাখার কারণে সেখানে মানুষের চলাচল ও বসবাসে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হলেও, খুবই ধীর গতিতে সিটি কর্পোরেশন কর্মীরা কোনভাবে কিছু কিছু ময়লা নিলেও, পরক্ষণেই নানাস্থান থেকে আবার ময়লা এসে পুরো কন্টিনার ভরে যাচ্ছে। দুর্গন্ধে যাত্রীরা দ্রুত অপর পাড়ের ফুটপাতে দৌঁড়ে চলে যাচেছ! মনে হচ্ছে শহরের কেন্দ্রে এটি ময়লার একটি ভাগাড়! এ যন্ত্রণাটি সৃষ্টিকারী কোন ভূমি দস্যু বা স্থানীয় মাস্তান নয়, খোদ সিটি কর্পোরেশন!

আধুনিক রাজধানী শহর ঢাকার বর্তমান ট্রাফিক ব্যবস্থা এখন এতোই অকার্যকর ও হাস্যকর যে, বিশ্বের যে কোন দেশের মানুষ আমাদের রিক্সা, গাড়ি, বাস, ট্রাক, ভ্যান ইত্যাদি চলাচলের দৃশ্যকে একটি অসুস্থ্য জাতির অসুস্থ্য আইন বলে মন্তব্য করবে। অথচ ঢাকার চেয়ে কম প্রশস্ত রাস্তা নিয়ে হংকং ইত্যাদির মত জনবহুল সিটি যানজটহীনভাবে তাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা চালাচ্ছে চমৎকারভাবে। কিন্তু আমাদের মেধাহীনতা আর অদক্ষতার সবচেয়ে উজ্জলতর উদাহরণ হচ্ছে ভেঙে পড়া ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেম। অথচ আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না।

আমার পরিচিত নিম্নবিত্ত এক ব্যক্তির ৫-বছরের সস্তানকে সে কিছুতেই কমপ্লা নামক একটি বিদেশী খাবার ছাড়া আর কিছুই খাওয়াতে পারেন না, কারণ শিশুটি টিভিতেকমপ্লানের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে ঐ তথাকথিত মূল্যবান খাবারটির প্রতি এতোই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে, তাকে খাদ্যপ্রাণযুক্ত শাক-সব্জি, ছোট মাছ ইত্যাদি কিছুই আর খাওয়ানো যাচ্ছে না। বর্ণিত ব্যক্তি এখন বাধ্য হয়ে তার মৌলিক প্রয়োজনের অনেক জিনিসপত্র না কিনে শিশুটির দাবীমত কেবল কমপ্লা কিনছে। এভাবে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষতিকর অথচ আকর্ষণীয় চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে গ্রামীণ নুন আনতে পাস্তা ফুরাণোর সংসারেও এখন ছোটখাটো ঘরোয়া বা মেয়ে দেখানোর পান-চিনির অনুষ্ঠানেও চা-পানের পরিবর্তে নানা রং আর গেটআপের ড্রিংকস, ন্যুডলস ইত্যাদি পরিবেশন করতে হচ্ছে ক্ষতিকর হওয়া সত্বেও। কিন্তু মানুষের মাঝে প্রচার হচ্ছেনা এর ক্ষতিকর দিকটি।
 
এভাবে এ জাতিটি নানাবিধ অপ্রতিরোধ্য জটিল সামাজিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে, যা থেকে তাকে পরিত্রাণ দেয়া সময়ের মাপকাঠিতে কষ্টকর হবে বৈকি! কিন্তু এ জাতির বিবেক তাকে ঝাকুনি দিচ্ছে না প্রচন্ডভাবে, যাতে বোধোদয় ঘটে এ সমাজের প্রত্যেকটি সদস্যের। আমরা আর কতকাল অপেক্ষা করবো আমাদের রাষ্ট্র আর সমাজ পতিদের বোধোদয়ের?     
লেখকের ফেসবুক ঠিকানা : https://www.facebook.com/DrLogicalBangal

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন