শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রসঙ্গ নারী : ধর্মীয় আর সামাজিক বর্বর আইন নারী খৎনা Female Circumcision : ৬৩

প্রসঙ্গ নারী : ধর্মীয় আর সামাজিক বর্বর আইন নারী খৎনা Female Circumcision

লালন ফকিরের কালজয়ি গান "সুন্নত দিলে হয় মুসলমান,নারীদের তা হলে কি বিধান?" নারীর জন্য অবমাননাকর, ক্ষতিকর, মানবিকতা আর স্বাধিনতা বিরোধী প্রায় সব কিছুই প্রবর্তন আর সংরক্ষণ করেছে ধর্ম। ব্যাবিলনে ইহুদি বা হিব্রুরা প্রথমে খতনার প্রবর্তন করে। এই প্রক্রিয়াটির চর্চা এখনো মুসলিম, খ্রিস্টান ও সর্বপ্রাণবাদীদের (আফ্রিকান প্যাগান) মধ্যে কমবেশি বিদ্যামান। এই খৎনার মাধ্যমে নারীর যৌনাঙ্গের একটি অংশকে কেটে ফেলে দেয়া হয়। ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা স্ত্রী খৎনা সাধারণত ৪-১০ বছর বয়সী মেয়েদের করানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১৪০-মিলিয়ন নারী এই বিভৎস অভিজ্ঞতার মুখোমুখী। এর মধ্যে ১০১ মিলিয়নই আফ্রিকাতে।

ইসলামের নবী একবার মদিনায় ঘটনাক্রমে একটি নারী খতনার সামনে পড়লে তিনি বলেন, “--- কাটার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যেয়োনা (গভীর করোনা), কারণ এটি মেয়ের জন্য ভাল এবং স্বামী তা অধিক পছন্দ করে” [আবুদাউদ, তাবারানী, বাইহাকী]। একে ইসলামে নারী খতনার সপক্ষে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

নারী খৎনার সপক্ষে যেসব যুক্তি ব্যবহৃত হয় তার মাঝে যুক্তিগুলো স্বাস্থ্য থেকে সামাজিক সুবিধা সম্পর্কিত বেশি। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা, কুমারীত্ব অক্ষূণ্ন রাখা, উর্বরতাশক্তি বাড়ানো, ঊচ্ছৃঙ্খলতা প্রতিরোধ করা, বৈবাহিক সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া, নান্দনিকতার অনুসরণ, পুরুষের যৌনক্ষমতা ও সুখ বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

এখনো যে সব দেশে এ ঘৃণ্য প্রথাটি প্রচলিত আছে তা হচ্ছে: বেনিন, বুরকিনোফাসো, চাদ, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, ঘানা, গিনি, কেনিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সোমালিয়া, সুদান, তানজানিয়া, টোগো, উজান্ডা, ক্যামেরুন, কঙ্গো, মিসর, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গায়েনা, গিনিবিসাউ, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, লাইবেরিয়া, মালি, ইয়েমেন, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, আমিরাত ইত্যাদি।

অভিবাসনের মাধ্যমে এটির চর্চা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু ঐতিহ্যমনা পরিবার তাদের মেয়েদের খৎনার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, যখন তারা তাদের মাতৃভূমিতে ছুটিতে যায়। যেহেতু পশ্চিমা সরকার নারী খৎনার ব্যপারে খুব সচেতন, তাই তাদের আইনগুলো বহুদেশে নারী খৎনাকে আইনের লঙঘন হিসেবে সাব্যাস্ত করতে সাহায্য করেছে। খালিদ আদেম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ব্যক্তি, যাকে ২০০৬ সালে তার কন্যাকে খৎনা করানোর জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়। যে সমস্ত দেশে নারী খৎনার ব্যপকতা সবচেয়ে বেশি সেগুলো হলো মিশর, সেই সাথে সুদান, ইথিওপিয়া ও মালি-তে। সাম্প্রতিক কালের সংখ্যায় ধারণা করা হয় ৯০% মিশরীয় নারী খৎনার শিকার হয়েছে। ২০০৮ এ মিশর একটা আইন পাশ করে যা নারীদের এফজিএম (মুসলমানী/লিঙ্গের ত্বকচ্ছেদ) নিষিদ্ধ করে। জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) ৬ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক নারী যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার নানা কুসংস্কারে নিমজ্জিত বাংলাদেশ এটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত!

https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1525977464303071&set=a.1381466915420794.1073741828.100006724954459&type=1&theater 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন