এক বিশ্বস্রষ্টা কিংবা প্রকৃতি হয়তো সৃষ্টি করেছে এই বিশ্বভ্রমান্ড এবং তা মানুষের কল্যাণেই। তিনি মানুষের সুবিধার্থে নানা বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীতে এবং পৃথিবীর বাইরে। কিন্তু মানুষ নিজেদের সুবিধাবাদী চরিত্রের বহিপ্রকাশ হিসেবে তার অপব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন করেছে বিবিধ পণ্য, যা মূলত: অপর মানুষ ও প্রাণিকূলের ক্ষতিই করছে বেশী। তারপরও মানুষ থামছে না তার বা তাদের নেতিবাচক অপসৃষ্টি থেকে, প্রতিনিয়তই সে চালাচ্ছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে তার খরগহস্ত। আমরা এখানে দেখার চেষ্টা করবো প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্টিগুলোর ভিন্নতার রূপ।
প্রকৃতি মানুষের জন্যে সৃষ্টি করেছিল আঙুর, আপেল, যব আর বার্লি, মানুষ তা দিয়ে সৃষ্টি করলো ‘হুইস্কি’আর‘ভোদ্কা’। প্রকৃতি সৃষ্টি করলো সৌন্দর্যময়ী ফুল, আর মানুষ তা রূপান্তরে বানালো ‘স্যাম্পেন’। প্রকৃতি তৈরী করলো বিবিধ ঔষধি লতা-গুল্প, মানুষ তার নির্যাস নিয়ে বানালো ‘হিরোইন-কোকেন-সিগারেট’ আরো কত কি?প্রকৃতি আমাদের উপহার দিল চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একক এক পৃথিবী, আর মানুষ তাকে টুকরো টুকরো করে বানালো নৈরাজ্যকর ‘রাষ্ট্র’ তথা আমেরিকা, বাংলাদেশ, ইরাক আর কত কি! প্রকৃতি সৌন্দর্যের প্রতিক বানালো ‘নারী’, মানুষ তাকে বানালো বাণিজ্যিক ‘পতিতা’। প্রকৃতি বানালো ‘পুরুষ’, মানুষ তাকে বানালো ‘দেবতা’ আর ’ঈশ্বর’। প্রকৃতি বানালো সৌন্দর্য আর গানের পাখি, মানুষ তার শরীরকে করলো‘উপাদেয় খাদ্য’। প্রকৃতি আমাদের উপহার দিল ‘ঘাস-ফুলে’ সমৃদ্ধ সমতল ভূমি, মানুষ তাকে বানালো ‘পিচ আর কনক্রিটের রাস্তা’। প্রকৃতি আমাদের দিল নানাবিধ ধাতু, মানুষ তাকে বানালো ‘ট্যাংক’ আর সব‘মারণাস্ত্র’। প্রকৃতি দিল ইউরেনিয়ামসহ নানাবিধ তেজস্ক্রীয় পদার্থ, মানুষ তার সাহায্যে তৈরী করলো‘পারমাণবিক অস্ত্র’। প্রকৃতি দিল সমুদ্র কন্যা কিউবার ‘গুয়ানতোনামো’ দ্বীপ, মানুষ তাকে বানালো বিশ্বের‘পৈশাচিক কারাগার’। প্রকৃতি মুরগীর বংশ রক্ষার্থে সৃষ্টি করলো তার ডিম, মানুষ তার থেকে প্রথমে সৃষ্টি করলো তার জন্যে ‘অমলেট’ পরবর্তীতে ‘মুরগীর রোস্ট’। প্রকৃতি স্তন্যপায়ী প্রাণির শাবকের জন্যে দিল তার বাটে ‘দুধের পুষ্টিকর ফোয়ারা’, মানুষ শাবকের সামনেই তার মার ‘ওলান’ থেকে কেড়ে নিল তার ‘পুষ্টিকর পাণীয়’ নিজের বলে। প্রকৃতি চাঁদের বুকে সৃষ্টি করলো ‘অনন্ত নিস্তব্দতার সৌন্দর্য’, আর দোপায়া মানুষদের প্রতিনিধি হিসেবে ‘আর্মস্ট্রং’ গং-রা সেখানে হাজির হয়ে ভেঙে দিল চাঁদের ‘সৌন্দর্যময়তা নিস্তব্দতার ঘুম’।
প্রকৃতি ‘লাসভেগাসে’ সৃষ্টি করেছিল ‘অনিন্দ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য’, আর মানুষ তার লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গীতে তাকে রূপান্তর করলো ‘বিশ্ব জুয়ার বাজার’ হিসেবে। ম্যাকাও দ্বীপকে প্রকৃতি বানিয়েছিল ‘সমুদ্রের নিস্তব্দ কন্যা’ হিসেবে, আর মানুষ তাকে বানালো প্রাচ্যের ‘বেশ্যালয়’। প্রকৃতি ‘গঙ্গা’কে সৃষ্টি করলো তীরবর্তী কৃষকদের জলসেচ আর বাঁধাহীন গতিতে সমুদ্রে অবগাহনের জন্যে, মানুষ তার গতি রোধে সৃষ্টি করলো‘ফারাক্কা বাঁধ’ আর কেউবা বানালো স্বর্গে যাওয়ার পবিত্র নদী। প্রকৃতি সৃষ্টি করলো ‘আশরাফুল মাকলুকাত’,আর মানুষ তাকেই বানোলো ‘কৃতদাস’। প্রকৃতি সৃষ্টি করলো ‘যিশু’ আর ‘সক্রেটিস’কে, মানুষ তাঁদের হত্যা করলো ‘ক্রুশবিদ্ধ’ আর ‘হ্যামলক’ পানে বাধ্য করে। প্রকৃতি সৃষ্টি করলো ‘নির্ভেজাল সাধারণ মানুষ’, আর সেই মানুষেরা সৃষ্টি করলো ‘গোত্র, বর্ণ, ধর্ম’ আরো কত উপাখ্যান? প্রকৃতি সৃষ্টি করলো ‘গ্রামীণ বাঙালি চঞ্চল বালিকা’, মানুষ তাকে বানালো বস্তিতে বসবাসকারী পোড় খাওয়া অধিকারহীন ‘গার্মেন্টস শ্রমিক’। প্রকৃতি যাকে বানিয়েছিল কলকাকলীতে মুখরিত ‘হাজারীবাগের চর’, মানুষ তাকে বানালো ‘পচা চামড়ার ভাগাড়’। প্রকৃতি যাকে বানিয়েছিল ‘প্রকৃতির প্রাণি’, মানুষ তাকে ভাগ করলো ‘গৃহপালিত’ আর ‘বন্য’ হিসেবে। প্রকৃত সারা বিশ্বে সৃষ্টি করেছিল মাত্র ২-জন মানব-মানবী, আর অল্প দিনেই বাঙালিরা তাকে বানোলো ১৬-কোটি।
মানুষ কর্তৃক প্রকৃতিকে ভাঙা আর রূপান্তরের এ নেতিবাচক ধারা আদৌ থামবে কি? না কি চলতেই থাকবে মানুষ নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত? প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের এ দুষ্ট চক্রই মানুষকে একদিন অবরুদ্ধ করবে অতল গহীন মৃত্যু গহবরে, যা থেকে প্রকৃতি কখনো আর তাকে বেরুতে দেবেনা এ সুনির্মল পৃথিবীতে !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন