সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রসঙ্গ হিজড়া : বিভিন্ন ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ - ৩ # ১১১

 প্রসঙ্গ হিজড়া : বিভিন্ন ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ 

[ ৩ পর্বের লেখাটির পর্ব # ৩ ] ১ম, ২য় পর্ব ইতোমধ্যেই পোস্টকৃত
:
খ্রিস্টান ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ
:
গ্রীক eunochos থেকে Eunuchs শব্দটি এসেছে। খ্রিষ্ট ধর্মের নিউ টেস্টামেন্টে স্পষ্ট করে তৃতীয় লিংগ ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যদিও এখানে Eunuchs বলতে নপুংশক ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে। বিবাহ এবং বিচ্ছেদ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রাক্কালে জেসাস বলেন, কিছু মানুষ জন্ম থেকেই Eunuchs, আবার কিছু মানুষ অন্যদের দ্বারা Eunuchs এ পরিণত হয় এবং আরো কিছু মানুষ আছে, যারা স্বর্গরাজ্যের জন্য নিজদেরকে Eunuchs এ রুপান্তরিত করে।
:
২০০০ সালে ক্যাথলিক সম্মেলনের ডকট্রিন অফ ফেইথের উপসংহারে বলা হয়, চার্চের দৃষ্টিতে একজন মানুষ ট্রান্সসেক্সুয়াল সার্জিকাল অপারেশনের মাধ্যমে একজন মানুষকে শুধু বাহ্যিকভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। “ the transsexual surgical operation is so superficial and external that it does not change the personality. If the person was a male, he remains male. If she was female, she remains female.” খ্রিস্টান ধর্মে একজন ইথিওপিয়ান ইনুখ সম্পর্কে আলোচনার কথা আছে। বিবাহ এবং তালাক নিয়ে উত্তর দেয়ার সময় যীশু এক পর্যায়ে বলেন, “কিছু মানুষ আছে যারা জন্ম থেকে ইনুখ এবং আরো কিছু মানুষ আছে যাদেরকে অন্যেরা ইনুখ বানিয়েছে এবং আরো এক প্রকৃতির মানুষ আছে যারা স্বর্গরাজ্যের জন্য নিজেদেরকেই ইনুখ বানিয়েছে। এখানে একজন ইথিওপিয়ান ইনুখকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হবে কিনা সেই বিষয়েও আলোচনা করা হয়।
:
কিছু খ্রিস্টান সংঘ হিজড়াদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেন। ইউনিটারিয়ান একটি উদার ধর্মমত। তাদের মূল খ্রিস্টান ধর্মের সাথে যুক্ত। ১৯৭৯ সালে তারাই সর্বপ্রথম হিজড়াদের পূর্ণ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে। and the first to open an Office of Bisexual, Gay, Lesbian, and Transgender Concerns in 1973. ১৯৮৮ সালে উইনিটারিয়ান উইনিভার্সালিস্ট এসোসিয়েশান প্রথম একজন হিজড়া ব্যক্তিতে মনোনীত করে। ২০০২ সালে শ্যন ডেন্নিসন প্রথম হিজড়া ব্যক্তি যিনি ইউনিটারিয়ান ইউনিভার্সালিস্ট মন্ত্রনালয়ে ডাক পান। ২০০৩ সালে ইউনাইটেড চার্চ অফ খ্রিস্ট সকল হিজড়া ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দেয়। ২০০৫ সালে ট্রান্সজেন্ডার সারাহ জোনস চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ধর্মযাজক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৮ সালে ইউনাইটেড মেথোডিস্ট চার্চ জ্যুডিশিয়াল কাউন্সিল রায় দেন যে ট্রান্সজেন্ডার ড্রিউ ফনিক্স তার পদে বহাল থাকতে পারবেন। ঐ একই বছরে মেথোডিস্টদের একটি সাধারণ বৈঠকে একাধিক হিজড়া ক্লারজির বিরুদ্ধে পিটিশান খারিজ করে দেয়া হয়।
:
বৌদ্ধ ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ

অধিকাংশ বৌদ্ধ লিপিতে ধর্ম প্রতিপালনে কোন লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন করা হয়নি। নির্বাণ লাভের জন্য কামনাকে এই শাস্ত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। থাই বৌদ্ধধর্মে "কতি" বলে একটি শব্দ আছে। মেয়েদের মত আচরণকারী পুরুষকে কতি বলা হয়। এটা সেখানে পুরুষ সমকামীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। থাইল্যান্ডে কতিদের বিবাহের অনুমতি নেই। তারা কখনোই বিয়ে করতে পারবে না। থাইল্যান্ডে কতিদের নারীতে রুপান্তরিত হওয়া কি পুরুষ বিয়ে করা এখনো আইনত অবৈধ। কিন্তু হিজড়া মহিলারা তাদের ইউরোপীয় সঙ্গীকে বিয়ে করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তাকে থাইল্যান্ড ত্যাগ করে তাদের সঙ্গীদের দেশে চলে যেতে হবে।
:
ইহুদি ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ
:
মোজেস বা হযরত মুসার অনুসারীদের কে বলা হয় ইহুদি। ইহুদি ধর্মে হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডারদের “সারিস” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হিব্রু ‘সারিস’ ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে "eunuch" অথবা "chamberlain" নামে। ‘তনখ’ এ সারিস শব্দটি ৪৫ বার পাওয়া যায়। সারিস বলতে একজন লিঙ্গ নিরপেক্ষ বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি শক্তিমানের প্রতিনিধিত্ব করেন। “ইশ্বর সারিসদের কাছে এই বলে প্রতিজ্ঞা করছেন, তারা যদি সাবাথ পালন করে এবং রোজা রাখে, তাহলে তাদের জন্য স্বর্গে একটি উত্তম মনুমেন্ট তৈরী করবেন।” (ইসাইয়াহ, ৫৬)[২২]। “তোরাহ” তে ক্রস ড্রেসিং(যেমন পুরুষের নারীর মত পোষাক পরা) এবং জেনিটাল বা শুক্রাশয় ক্ষতিগ্রস্থ করার ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। সেজন্য অনেক ইহুদি হিজড়াদেরকে ধর্মের বাইরের মানুষ মনে করেন। কারণ হিজড়ারা বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পরে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে হিজড়ারা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী অথবা পুরুষে নিজেদের রুপান্তর করে নিতে পারবেন। ইহুদি ধর্মের অনেক শাখা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানালেও জুদাইজমের সকল ধারা এই রুপান্তরকামিতাকে এখনো সমর্থন করে নাই।
:
বাহাই ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ
:
বাহাই ধর্মবিশ্বাসে হিজড়াদেরকে sex reassignment surgery (SRS) এর মাধ্যমে একটি লিঙ্গ বেছে নিতে হবে এবং শল্যচিকিৎসকের মাধ্যমে লিঙ্গ রুপান্তর করতে হবে। এসআরএসের পরে তাদেরকে রূপান্তরিত বলে গণ্য করা হবে এবং তারা উপযুক্ত সংগী নির্বাচন করে বাহাই মতে বিবাহ করতে পারবে।
:
এখন প্রশ্ন ধর্ম বিশ্বের সকল মানুষের সব সমস্যার সমাধান নিয়ে এলেও হিজড়া সমস্যাটি এড়িয়ে গেছে কিভাবে? বিশেষ করে ইসলাম ধর্মে? যদিও বলা হয় শেষ ধর্ম হিসেবে ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। 

[ ৩ পর্বে শেষ করা হলো হিজড়া প্রসঙ্গ ] ১ ২ পর্ব ইতোপূর্ব পোস্টকৃত


https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1680911065476376&set=a.1381466915420794.1073741828.100006724954459&type=1&theater

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন