শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমার ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধমালা # ৬ : ভাষা প্রবন্ধ # ৫৮

আমার ভাষা বিষয়ক চিন্তন প্রপঞ্চ # ৬
(বাঙলা ভাষার আধুনিকায়ন তথা সংস্কার বিয়ষক ১০-টি পোস্টের সিরিজ)

আমাদের বাংলায় বর্তমানে অব্যবহৃত বিধায় সংস্কৃত থেকে আগত ণ, ঞ, ষ, শ, ঈ, ঊ,ঁ, ড়, ঢ়, ঋ, য, শ, ৎ, ং,ঃ, ঋ, ক্ষ বাদ দিতে হবে। বিদ্যাসাগর যদিও অনেক আগেই বাংলা বর্ণ থেকে ৯ ও ঋ বাদ দেয়ার কথা বলেছিলেন। তখন ‘৯’ বাদ দিলেও ‘ঋ’ এখনো চলছে ‘র’-এর বিকল্প হিসেবে। এ ক্ষেত্রে অক্ষরকে অখখোর, পরীক্ষাকে পরিখখা, ইক্ষুকে ইখখু, ক্ষমতাকে খমতা, আঁকাবাঁকাকে আকাবাকা, আঁচলকে আচল, খাঁটিকে খাটি, ঈগলকে ইগল, ঈদকে ইদ, দূষণকে দুসন, ঊষাকে উসা, ঊরুকে উরু, ঋণকে রিন, ঋষিকে রিসি, নির্ণয়কে নির্নয়, সূক্ষ্মকে সুখখো লিখলে কোন সমস্যা হবেনা, কারণ এখনো আমরা একই বানানের ‘কান’ ‘মাথা’ ‘হাত’ ইত্যাদি শব্দকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করি। আমাদের ‘শাসন’ ও ‘শোষণ’ বানানে এ ভিন্নতা কেন তা কি কেউ যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবে? আসলে বিশেষ কোন ‘শব্দের অর্থ প্রকাশ করে তার প্রসঙ্গ’ অর্থাৎ শব্দটি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে শব্দের অর্থ, এ ক্ষেত্রে বানান মুখ্য ভূমিকা নির্ণায়ক নয়।

আর আমাদের বর্ণ বা লিপি এসেছে বহু পুরণো কুটিললিপি থেকে, যা আবার এসেছে তার চেয়েও পুরণো ব্রাহ্মীলিপি থেকে, যার ব্যবহার শুরু হয়েছিল মোটামুটি মগধ অঞ্চলে ষষ্ঠ শতকে। শাসক মহীপালের ‘বাণগড় দানপত্রে’ কেবল ১০-টি বাংলা ‘বর্ণ’ পাওয়া যায়। ১৭৭৮ সালে চার্লস উইলকিনস ছাপাখানার জন্যে প্রথম বাংলা হরফ তৈরী করলে হরফের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০-টিতে গিয়ে দঁাড়ায়। এই লিপিগুলো সংস্কৃত বর্ণের আদলে তৈরীকৃত। কুটিললিপি থেকে বর্তমান চেহারার বাংলা বর্ণ পর্যন্ত প্রায় ১০০০-বছরে প্রায় ১০-টি ধাপ পেরিয়ে বর্তমান চেহারায় পৌঁছতে বাংলা বর্ণকে অনেক সংস্কার-বিয়োজন করতে হয়েছে। তবে বর্তমান সমস্যা হচ্ছে, আধুনিক বাংলা বর্ণগুলো যার উচ্চারিত ধ্বনির সঙ্গে অনেকগুলোর কোন মিল নেই। তা ছাড়া বর্তমান প্রচলিত সংযুক্ত ধ্বনিগুলোতে কিছু বর্ণ অপ্রয়োজনীয় এবং কিছু বর্ণ বিভ্রান্তিকর বিধায় তা পরিহার বা বর্জন করলেও ভাষার কোন ক্ষতি হবে না বরং ভাষা আধুনিক, সহজবোধ্য ও যৌক্তিক হবে। যেমন দ্বিগুণকে ‘দিগুন’ লিখলে কোন ক্ষতি নেই।

একইভাবে উচ্ছ্বাসকে উচ্ছাস, জ্বরকে জর, নক্সাকে নকসা, স্বতঃসিদ্ধকে সতসিদধো, পার্শ্বকে পারসো, লক্ষ্মীকে লকখি, ক্ষেতকে খেত, স্মৃতিকে সৃতি, আত্মাকে আততা, ব্রাক্ষ্মণকে ব্রামমন, বাঞ্ছনীয়কে বানছোনিয়ো, সূক্ষ্মকে সুকখো লিখলে কোন ক্ষতি নেই। আবার বর্তমানে ব্যবহৃত সংযুক্ত বর্ণগুলো বেশ বিভ্রান্তিকর, বিশেষ করে ‘নতুন ডিজিট্যাল প্রজন্ম’ এবং যারা বাংলা ভাষা কিংবা ‘ভাষাতত্ত্বে’ উচ্চতর পর্যায়ে পড়ালেখা করেনি তাদের জন্যে এবং এগুলো জটিল বিধায় এর নিম্নরূপ সংস্কার হতে পারে। ‘ক্ষ্ম’, ‘হ্ম’ এবং ‘ক্ষ’ প্রায় একই চেহারার বিধায় বেশ বিভ্রান্তিকর, এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্যে এই তিনটিকেই ভেঙে সহজীকরণ বা কমপক্ষে দু’টোর চেহারা পাল্টাতে হবে। একইভাবে ষ-স, ক্ত-ত্ত-ও, ট্ট-ট্র, ক্র-ত্রম্ন, ক্ম-কন-ক্স,ঙ্গ-ঈ, এ-ত্র, ত-৩, দ্ধ-দ্ব-ব্দ, ন্ধ-ন্দ্ব, থ-ত্থ, হ্ন-হ্ণ-হৃ, স্খ-ষ্ফ-স্ফ, ম্ন-ন্ন-ণ্ণ, ষ্ঠ-ণ্ঠ-ন্ঠ, ঞ্চ-ঞ্ছ-ঞ্জ, ম্ব-ন্ব-ণ্ব ইত্যাদি প্রায় একইরূপের বিভ্রান্তিকর চেহারার সংযুক্ত বর্ণগুলোকে হয় ভেঙে দিয়ে আলাদা করতে হবে, নতুবা কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী আধুনিক ‘ইউনিকোডে’র বর্ণ উদ্ভাবন করতে হবে। আর সংস্কৃত থেকে আগত জটিল বানানকে আমাদের মত করে (যেভাবে বাঙালিরা বর্তমানে উচ্চারণ/ব্যবহার করছে) সংশোধন করতে হবে।

যেমন অগ্রিমকে অগরিম, অঙ্ককে অংক, ঋতুকে রিতু, কীর্তণকে কির্তন, স্বামীকে সামি, নিষ্ক্রিয়কে নিসকৃয়ো, বিদ্যাকে বিদদা, বিস্ময়কে বিসসয়, ভ্রান্তিকে ভেরান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া সংযুক্ত বর্ণগুলো না ভাঙার কারণে ভেতরে কি আছে তা অনেকের কাছে বোধগম্য নয়। যেমন ক+ষ=ক্ষ, ষ+ণ=ষ্ণ, ঞ+চ=ঞ্চ, ঞ+জ=ঞ্জ, ক+ষ+ম=ক্ষ্ম, হ+ম=হ্ম ইত্যাদি। এগুলোর গঠন না জানলে পার্থক্য বের করা বেশ কষ্টকর বিধায় তা ভেঙে দিতে হবে। যেমন বাক্য (বাক্ক), ক্ষতি (খতি), লক্ষ্য (লক্খ), ভাগ্য (ভাগগো), বাহ্য (বাজ্ঝ), কথ্য (কতথ), পদ্ম (পদ্দ), বাদ্য (বাদ্দ), সভ্য (সবভ), বিশ্ব (বিসসো), হাস্য (হাসসো) লিখলে ভাষা কি আরো সহজবোধ্য হবে না?
ভাষা বিষয়ে জানতে আগ্রহি? তো পড়ুন পর্ব # ৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন