শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

১৫০ তলা ভবনের একটা যৌক্তিক প্রস্তাবনা : ৫৩

১৫০ তলা ভবনের একটা যৌক্তিক প্রস্তাবনা
:
বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ হলেও দেশটির সরকারি কর্মকান্ড চলছে নানাবিধ অপচয়মূলক পদ্ধতিতে। দেশটির বাজেটের প্রায় অর্ধেকই অপচয় হয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। রাষ্ট্রীয় পরিবহণ খাত, ফাইল নিয়ে বিবিধ অফিসে দৌঁড়াদৌঁড়ি এমন একটা মারাত্মক অপচয়। ধরুণ, বনবিভাগের একটি নিয়োগবিধি তৈরি হলো মহাখালি বনভবনে, তা চূড়ান্ত অনুমোদনে এলো সচিবালয়ে। তারপর একনেকে গেলো শেরেবাংলা নগরে, তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তেজগাঁ তাঁর কার্যালয়ে, রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্যে বঙ্গভবনে, গেজেটে প্রকাশের জন্য তেজগাঁ সরকারি প্রেসে। এ কাজটিতে মূল ফাইলটি নানাবিধ অফিসে নিয়ে যেতে আনতে সময়, গাড়ি ফুয়েলের কত অচপয় হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু সব কাজগুলো যদি একই ভবনে হতো তবে কেমন হয়? দেখা যাক এমন একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা!
:
ঢাকা শহরে মূল সচিবালয় ছাড়াও সরকারি নানাবিধ অফিস কোনটা শেরে বাংলা নগরে, কোনটা উত্তরা, নিকুঞ্জ, মতিঝিল, গুলশান, মিরপুর. শ্যামলি অর্থাৎ ঢাকা শহরের সর্বত্র ছিটিয়ে রয়েছে। এসব অফিস কোনটা সরকারি নিজস্ব ভবনে, কোনটা আবার ভাড়া করা ভবনে অবস্থিত। যাতে হিসাব করলে কয়েকশ' একর জমি ছাড়াও নানাবিধ একতলা, বহুতলা ভবনে নানা রকমের নানাবিধ আকার আয়তন, চেহারা সুরতের দপ্তর দেখা যাবে। পুরো সরকারি দপ্তরে গাড়ি সরবরাহের জন্য বিদ্যমান আবার সরকারি বিশাল পরিবহণ পুল। যা আবার সচিবালয়ের বাইরে অবস্থিত। এর সবগুলোকে একটা ভবনে আনা গেলে ৫০% সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যার বাস্তবায়ন হতে পারে নিম্নরূপ পদ্ধতিতে।
:
এ জন্যে একটা প্রকল্প করে প্রথমে সব সরকারি জমি+ভবন+স্পেসের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। ধরা যাক সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত ঢাকা শহরের সর্বত্র আলাদা প্রায় ১০০টি সরকারি ভবন বিদ্যমান। যাতে ১০০ একর জমি এবং যাতে ৫-লাখ বর্গফুট স্থান ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন এমন একটা বড় বহুতল ভবনের নকশা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে উপর্যুক্ত সব অফিসগুলো একই ভবনে আনা যায়। হতে পারে এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় উঁচু ভবন হবে এ ঢাকাতেই। হতে পারে এটি বাণিজ্য মেলা মাঠে বা আশেপাশের যায়গা নিয়ে।
নকশা প্রণয়নের পর এ ভবনটি নির্মাণ করবে সরকার। এ জন্য সরকারের আলাদা কোন টাকা খরচ করতে হবে না। সর্বত্র ঢাকা শহরে সরকারের যে ১০০টি ভবন, আর ১০০ একর জমি ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গভবন, সচিবালয়সহ) তা প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দিতে হবে ভবনসহ জমি। ঐ ভবন ও জমির বিক্রিত টাকায় অবশ্যই বিশ্বের বৃহত্তর একটি ভবন নির্মাণ সম্ভব হবে আলাদাভাবে।
:
এ ভবনটি হবে বিশ্বের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন, বড় আর সর্বাধুনিক (ধারণার জন্যে একটা প্রবেশ নকশা ও ভবনের ছবি দেয়া হলো)। ধরা যাক, ভবনটি ১৫০ তলা বিশিষ্ট। নিরাপত্তার জন্যে ভবনটিতে থাকবে ১৫০টি প্রবেশ পথ ও ১৫০টির বেশি লিফট। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯১ তলাতে। ওখানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি, দর্শনার্থীরা কেবল ৯১ নম্বর প্রবেশপথ ও ৯১ নম্বর লিফটি ব্যবহার করবে। ঐ লিফটি সরাসরি নিচ থেকে ৯১ তলাতে চলে যাবে ১ মিনিটে। অন্য কোন তলাতে ঐ ফ্লোরের কেউ যেতে আসতে পারবে না। একইভাবে অন্যান্য সকল তলাতে এভাবে আলাদা গেট ও আলাদ লিফট থাকবে। সবার উপরে হয়তো রইলো রাষ্টপতি আর প্রধানমন্ত্রীর ফ্লোর। সেখানেও এভাবে কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গই প্রবেশাধিকার পাবে। কিছু জরুরি মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে যাতে ভেতর থেকে আসা যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তার জন্য থাকবে ছোট ইন্টারন্যাল লিফট। যেমন ১৫০ তলার রাষ্ট্রপতির ফ্লোর থেকে ১৪৯ এ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ফ্লোরে আসা যাওয়ার জন্যে অভ্যন্তরীণ ছোট লিফট/স্কেলেটার।
:
রাষ্টপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সচিবগণ যাতে তাদের অফিসসংলগ্ন স্থানে বসবাস করতে পারেন, সে জন্য তাদের ফ্লোরেই তাদের আবাসিক ব্যবস্থাও থাকবে। ভবনটির নিরাত্তার জন্য গঠন করতে হবে একটা বিশেষ স্কোয়াড। তারা সবকিছু স্কান করে ঢোকাবে, বের করবে।
:
এটা করা কোন কঠিন কাজ নয়, দরকার সদিচ্ছা আর সাহস। করতে পারলে বাজেটের অর্ধেক টাকাই সাশ্রয় হতে পারে গাড়ি, সময়, ফাইল চালাচালির অপচয় বন্ধ করে। বিশ্বের বুকে এমন একটা ভবন নির্মাণ করে বাংলাদেশ চমকাতে পারবে পুরো বিশ্বকে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভবনটির চুড়ায় ১০০ ডলার দিয়ে একবার উঠতেও আগ্রহি পর্যটকের অভাব হবে না আজকের এ বিশ্বে! যেমন অনেক টাকা দিয়ে উঠতে হয় টুইন টাওয়ারসহ বিশ্বের বড় বড় ভবনগুলোতে! তো কেমন হয় এ কাজটি করতে পারলে বাংলাদেশে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন