সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পৃথিবীতে যদি একটি ধর্ম, একটি ভাষা ও একটি রাষ্ট্র হত ! # ১৩৯

পৃথিবীতে যদি একটি ধর্ম, একটি ভাষা ও একটি রাষ্ট্র হত ! 
একুশ শতকের এ পৃথিবীটা বর্তমানে রাজনৈতিক বিভাজনে বহুধা রাষ্ট্রে বিভক্ত। কোন রাষ্ট্র মহাশক্তিধর, কোনটি আবার ক্ষুদ্র শক্তিহীন। আয়তনে কেউ কেউ রাশিয়া-অস্ট্রেলিয়ার মত বৃহৎ, আবার কোনটি বেলিজ বা টোঙ্গার মত ক্ষুদ্রায়তনের। কোন কোনটি জ্ঞান- বিজ্ঞান শিল্প-প্রযুক্তিতে উন্নত, কোনটি শিক্ষা-যোগাযোগে নিতান্তই গরিবী হালতে। কোন কোন রাষ্ট্র শোসকের ভূমিকায়, অধিকাংশ আবার শোষিতের দলে। 
সৃষ্টিকর্তাতত্ত্বে কিংবা ডারউইনের বিবর্তনবাদে, যাতেই বিশ্বাসী হোকনা কেন, প্রথম পৃথিবীটা ছিল কিন্তু একটি মাত্র ‘দেশ-রাষ্ট্র’। কালক্রমে মানুষ তাকে নিজ বা গোষ্ঠী স্বার্থে বহু ভাগে ভাগ করলো। এখন কেউ বলছে এ রাষ্ট্রটি আমাদের, ওটা তোমাদের। এদেশে ‘ওমুক ওমুকেরা’ ঢুকতে পারবে কিংবা পারবে না। এ ঢোকার জন্যে ‘পাসপোর্ট ভিসা’ কত কিছু বের করলো বর্তমান ‘সভ্য’ মানুষ।

‘আদম-ইভ’ তত্ত্ব মতে পৃথিবীতে মানব-মানবী এসেছিল মাত্র ২-জন। তাদের ভাষাও ছিল অবশ্যই একটি। সময়ের বিবর্তনে তার বংশ বিস্তার ঘটে এবং ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর সর্বত্র। ভাষা, চেহারা আর কালচার পাল্টে যায় পরিবেশ তথা আবহাওয়ার কারনে নানা উপায়ে। ডারউইনবাদীরা মানুষের বিবর্তনকে দেখেছেন ‘প্রাইমেটাজ, নিয়্যানডারটাল, ক্রোম্যাগনন, প্রোটো-অস্ট্রালয়েড, পিথেকানথ্রোপস্, হোমো ইরেক্তুস প্রভৃতি ধাপের বিবর্তিত রূপ হিসেবে। বিবর্তনের মাধ্যমেই মানুষের গায়ের রং, চেহারা, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়েছে বলে এই তত্ত্বে বিশ্বাসীরা মনে করেন। যদিও প্রথমাংশ ধার্মিক আর বস্ত্তবাদীদের মধ্যে মতভিন্নতা সৃষ্টি করে, তবে শেষাংশ কিন্তু উভয় বাদীদের ঐক্যমতের কথাও  বলে।

মানুষ পৃথিবীতে আগমনের পর থেকেই পালন করছে নানা ধর্ম। বর্তমান বিশ্বে পালিত হচ্ছে এমন প্রধানতম ধর্মগুলো হচ্ছে ইসলাম, খৃস্টান, হিন্দু, ইহুদী, বৌদ্ধ ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রাচীন ইরানের লোকেরা পার্শী-জরথুষ্ট্র ধর্ম পালন করতো, যাদের প্রধান দেবতা ছিল ‘অহুর-মাজদা’। চীনে কনফুসিয়াস ও লাওৎজু-‘তাও’ ধর্ম এখনো কমবেশী লোকে অনুসরণ করে। ভারতে গুরু নানকের ‘শিখ’ ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। এ ছাড়া সেখানে কেউ কেউ পালন করে ‘জৈন’ ধর্ম। ভারতের ‘ব্রাহ্ম’ ধর্মাবলম্বীরা উপনিষদ অনুসরণ করে। ফারাও/ফেরাউনদের সময়ে প্রাচীন মিশরের প্রধান দেবতার নাম ছিল ওসিরিস, সেৎ, আর গোর। খৃস্টান ধর্ম গ্রহণের আগে গ্রীস ও রোমে ধর্মের প্রধান দেবতা ছিল জিউস, আর্টেমিস, হেরা, ক্রোনস, পসাইডন, হেডিস, প্যালাস-এথেনা প্রমুখ। প্রাচীন ব্যাবিলন তথা বর্তমান ইরাকের দেবতা ছিল বেল, ইশতার, আন, কি, এনলিল ও এনকি। এগুলো এখন কালের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। যদিও ধর্মের প্রভাব মানুষের জীবনে সবচেয়ে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে এবং সম্ভবত কেবল মানুষই নিজ ধর্মের জন্যে বিনা বাক্যে নিজ জীবন উৎসর্গ করতে পারে যখন তখন! 

বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ প্রায় সাড়ে ছ‘শ কোটি। এ মানুষগুলো ভিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করে, ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম পালন করে। প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই তার ভাষা, ধর্ম ও রাষ্ট্রটি হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয়। পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন ভাষিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ কম হয়নি, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ সনে বাঙালিদের যুদ্ধটি হয়েছিল মূলত ভিন্ন ভাষিক ভিন্নতার কারনেই। যদিও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষই একই ধর্ম অনুসরণ করতো। ধর্মীয় কারনে যে কত যুদ্ধ বিশ্বে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে তা এই ক্ষুদ্র লেখায় আর আনতে চাইনা। আর বিশ্বের প্রধান প্রধান যুদ্ধগুলো সংগঠিত হয়েছে রাজনৈতিক তথা ভৌগলিক মানে রাষ্ট্রীয় বিভাজনের কারনে।

বর্ণিত তত্ত্বগুলো বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে, বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে যদি একটি ভাষা, একটি ধর্ম ও একটি মাত্র রাষ্ট্র থাকতো, তবে পৃথিবীটা কতই না সুন্দর হত! আমরা একুশ শতকের সভ্য (!) মানুষেরা কি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারিনা, আমাদের আগামী দিনের সুন্দর, শান্তি আর কল্যাণময় একটি পৃথিবীর জন্যে? বাস্তবে এটি আপাত রূপকল্প হলেও, এমন একটি চমৎকার সুন্দর পৃথিবী কল্পনা করতে দোষ কি? আর আদিম বা মধ্যযুগের মানুষেরাও কি কল্পনা করেছিল যে, তাদের প্রত্যেকের পকেটে একটা ‘সেলফোন’ থাকবে, আর তারা ‘এয়ার এম্বুলেন্সে’ করে চিকিৎসা করাতে বিশ্বের এ মাথা থেকে ও মাথায় যাবে উড়ে উড়ে?          


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন