সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমাদের একটি ‘জাতীয় স্লোগান’ থাকা কি উচিত নয়? # ১৩৪

আমাদের একটি ‘জাতীয় স্লোগান’ থাকা কি উচিত নয়? 
স্বাধীনতা লাভের পর আমরা আমাদের জাতীয় চেতনা ও মূল্যবোধকে লালন করার মানসে কতগুলো চেতনাকে গ্রহণ করেছি। ব্যাংক, বীমা, শিল্প-কারখানা ‘জাতীয়করণ’ ছাড়াও আমরা আমাদের কিছু ঐতিহ্যকে ‘জাতীয়’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। যেমন বিখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা ও লালন করার শপথ নিয়েছি। জাতীয় সঙ্গীত ছাড়াও গাঢ় সবুজ জমিনের মধ্যে ১০:৬ অনুপাতের একটি লাল বৃত্তের ‘জাতীয় পতাকা’ হৃদয়ে ধারণ ও সর্বত্র উত্তোলন করেছি, পানিতে ভাসমান শাপলা এবং উভয় পার্শ্বে একটি করে ধানের শীষ, চূড়ায় পাটগাছের পরষ্পরযুক্ত তিনটি পাতার উভয় পাশে দুটি করে তারকা সম্বলিত ‘জাতীয় প্রতীক’ গ্রহণ করেছি, ‘ইলিশ’কে আমরা ‘জাতীয় মাছ’ হিসেবে, ‘দোয়েল’কে আবার ‘জাতীয় পাখি’ হিসেবে, ‘কাঁঠাল’কে জাতীয় ‘ফল’, ‘শাপলা’কে ‘জাতীয় ফুল’, আমাদের অহঙ্কার সুন্দরবনের ‘রয়েল বেঙ্গল’কে ‘জাতীয় পশু’ হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়াও, আমরা আমাদের ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে জাতীয় পুরস্কার হিসেবে ‘একুশে পদক’, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয় পুরস্কার হিসেবে ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’, চলচ্চিত্রে উলেস্নখযোগ্য অবদানের জন্যে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষ অবদানের জন্যে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’, মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতির স্মরণে ‘জাতীয় বীরত্বসূচক খেতাব’ (বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম, ও বীর প্রতীক) প্রবর্তন করেছি। আমাদের গৌরবের দিনগুলো যথা শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ ও বিজয় দিবসকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে ঘোষণা ও পালন, তারুণ্য আর দ্রোহের কবি নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। তা ছাড়াও আমরা ‘জাতীয় যাদুঘর’, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার’, ‘জাতীয় টিকা দিবস’, ‘জাতীয় প্রেসক্লাব’, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ ইত্যাদির মত প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছি। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে আমরা আমাদের একটা ‘জাতীয় স্লোগান’ অদ্যাবধি প্রণয়ন করিনি। যদিও স্লোগানে স্লোগানে আমাদের কান এখন ঝালাপালা। প্রায় প্রত্যহ-ই আমরা ‘আগুন জ্বালো’ কিংবা ‘ওমুকের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ ধরণের শেস্নাগান শুনতে শুনতে অনেকটা স্লোগান বিমুখ হয়ে পড়েছি। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐহিত্যের প্রতীক হিসেবে জাতীয় ‘স্লোগান’ রক্ষা করছে। ভারতেও ‘বন্দে মাতরত’ তাদের ‘জাতীয় স্লোগান’। বিশ্বের বেশ ক‘টি দেশের জাতীয় স্লোগান ‘হুবহু’ পাঠকের অবগতির জন্যে এখানে তুলে ধরা হলো-
 
Austria : Austriae est imperare orbi universo, Algeria: بالشعب و للشعب Bil-sha’b wa lil-sha’b, Argentina: En Unión y Libertad, Armenia: ՄեկԱզգ, Մեկ Մշակույթ Mek Azg, Mek Mshakouyt, Bermuda: Quo fata ferunt, Bolivia: La Unión es la Fuerza, Brazil Independência ou Morte (Portuguese, Independence or Death!), Brunei: الدائمون المحسنون بالهدى, Bulgaria: Съединението прави силата, Canada: A mari usque ad mare, Cuba: Patria o muerte (Spanish, Homeland or death), Georgia: ძალა ერთობაშია (Georgian, Strength is in Unity), German Empire: Gott mit uns, Iraq & Iran : الله أكبر (Allahu Akbar), Kenya: Harambee (Swahili, Let's work together), Malaysia: Bersekutu Bertambah Mutu, Saudi Arabia: لا إله إلا الله محمد رسول الله (Lā ilāhā illā-llāh; Muhammadu-r-rasūlu-llāh), Singapore: Majulah Singapura, Vietnam: Ðộc lập, Tự do, Hạnh phúc

বাংলাদেশে বর্তমানে কোন জাতীয় স্লোগান না থাকলেও ‘জয় বাংলা’ ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ও অন্যতম স্লোগান। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীপক্ষ তথা পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসররা বিজাতীয় তথা বিভাষিক ‘জিন্দাবাদ’কে পাকিস্তানের পক্ষে ব্যবহার করতো। একাত্তরের পাকিস্তানী পক্ষের অনুসরণে অনেক বাংলাদেশী এখন জেনে কিংবা না জেনে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উর্দু ‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনিটি ব্যবহার করছে, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী বিধায়, সঙ্গত কারণেই জিন্দাবাদ ধ্বটিটিতে মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনাধানী অনেকেই মনোকষ্টে ভোগেন। নানা অর্বাচীন শাসককুলের হাতে পড়ে এবং অনেকটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ধ্বনি ‘জয় বাংলা’ আমাদের থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। হয়তো মুক্তিযুদ্ধের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে তা হারিয়েও যেত। তাই ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মার ধ্বনি ও মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনের অন্যতম প্রেরণা ও শক্তি ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের ‘জাতীয় স্লোগান’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ তথা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে বলে বিশ্বাস করি। যদিও এ স্লোগানে জামায়ত পাকিস্তানপন্থীদের কারো কারো গাত্রদাহ বেড়ে যেতেও পারে, তারপরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসিবে দাবীকারী বর্তমান সরকার অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা ইতিহাসের স্বার্থেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন