শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশ নামক রোগিটির ‘অসুখ’ সারবে কবে? ২ : ৮০

বাংলাদেশ নামক রোগিটির ‘অসুখ’ সারবে কবে?
২ পর্বের লেখার শেষ পর্ব (১ম পর্বের পর)

দরিদ্রতর জেলেরা দাদন নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে দস্যতুার কবলে জাল আর নৌকা হারিয়ে কোন রকমে পৈত্রিক প্রাণটি নিয়ে সাঁতরে ঘরে ফেরে ক্ষুধাতুর স্ত্রী-সস্তানের নৈকট্যে। আর শহুরে মধ্যবিত্তরা এই ভরা মৌসুমেও ৭০-টাকা কেজি দরে পিয়াজ, চাল বা বেগুণ কেনে অহরহ, যেখানে কৃষক পায় নিতান্তই নামমাত্র দাম। চমৎকার মোহিত বিজ্ঞাপনে ভিটে-জমি বিক্রি করেও বিদেশের প্লেনে উঠতে পারে না কলেজ শেষ করা তরুণ কিংবা গ্রামীণ বেকার যুবক। বিশাল আন্তর্জাতিক মেলায় গিয়েও ‘দরাদরি’ করতে হয় এদেশের সাধারণ ভোক্তাকে, যেখানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে ‘বিশাল ছাড়’ নামক বিজ্ঞাপন। আর পিএইচডি ধারী জ্ঞানী পন্ডিতকেও এদেশের কসাইর কাছে ওজনে ঠকতে হয় মাংস কিনে প্রায় প্রত্যহ-ই। টাওয়ারে তাৎক্ষণিক চাকুরী কিংবা বিদেশী ম্যাডামের জন্যে ‘পাত্র-চাই’ বিজ্ঞাপনে ‘দাঁড়িওয়ালা চলিবে’ শ্রেণির গ্রামীণ সহজ সরল ‘দাঁড়িওয়ালা’ পাত্রের ঘটিবাটি বিক্রির অর্থ দিয়ে পাঁচতারা হোটেলে লাঞ্চ-ডিনারের পর লাপাত্তা পাত্রীর সন্ধান কি ‘দাঁড়িওয়ালা’ পাত্র পান কখনো? জ্বীনের বাদশাদের গ্রাম ছেড়ে অভিজাত মেট্রো সিটিতে আবির্ভাব প্রতিনিয়ত ঠেকাতে পারবে কি র্যাব বাহিনী?

পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে অঙ্গহানীর ঘৃণ্য কাজে পুলিশের সম্পৃক্ততা এ সমাজেই হয়তো মানায় এখন। খাবার, ঔষধ আর ভোগ্যপণ্যের ভেজালে দিশেহারা জাতিকে তটস্থ থাকতে হয় সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজের কাছে প্রতিনিয়ত। পাবলিক পরিবহণে চড়তে নিজের মোবাইল বা টাকাটি ধরে রাখতে হয় শক্ত করে, নাহলে কখন পালিয়ে যায় অন্যের হাতে! দ্বিগুণ ‘টেম্পারিং’ মিটারের টেক্সিতে উঠেও ‘বখশিশ’ গুণতে হয় ড্রাইভারের কঠিন ‘আবদার’ মত! আর নতুন সনের প্রকাশিত শিশুর পাঠ্যবইটির কেবল কভার বদল করে প্রকাশক তার পুরণো বইটিই যে গছিয়ে দিয়েছে খোদ পাঠ্যপুস্তকবোর্ডকে, তা কিভাবে ধরবে শিশু আর অভিভাবকগণ আগাম?
স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ক্ষমতার রাজনীতিতে মদাসক্ত শাসকদের দেশবিদ্বেষী শাসনে এদেশের মানুষগুলো কি একেকটা অপমানুষে রূপান্তর হয়েছে সবাই? বখাটের কামাতুর হিংস্রতায় দিশেহারা এদেশের নিরীহ ললনারা এখন পথেঘাটে। কেতাবী গণতন্ত্রীদের ‘গণতান্ত্রিক ফতোয়া’য় দেশ আজ সর্বস্বান্ত, যারা দেশটিকে বানাতে চেয়েছিল আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তান। 

প্রাগৈতিহাসিকভাবে মানবিক মূল্যবোধ লালনকারী বাঙালির শান্তির সমাজ কি ভেঙে খান খান হয়ে পড়বে এ যুগে? না হয় এ দেশেই কিভাবে বাঙালি হত্যা করে তার জাতির পিতাকে শিশু আর অন্তসত্ত্বা নারীসহ? আবার পুরস্কৃত হয় হত্যাকারীরা! এদেশেই তাজুল ইসলাম নামক এক বাঙালি সামান্য জমির লোভে নিদারাবাদের বিরজাবালা আর তার ৬টি সস্তানকে হত্যা করে নির্মমভাবে এবং টুকরো করে তাতে লবণ আর চুন দিয়ে ড্রামে ভরে পুঁতে রাখে বিলের মাঝে? সময় আর কালবিমুখ মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ‘আলেম’ নামক বাঙালিরা হরতাল ডাকে প্রচন্ড গর্জনে। দুর্নীতির আন্ত. বিভাগীয় প্রতিযোগিতার এ নষ্ট সমাজে ইভ টিজিং, এসিড নিক্ষেপ, হত্যা, ধর্ষণ, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি এখন নিতান্তই ডালভাত।

কিন্তু এ দেশটিকে নষ্ট করার মিশন নিয়ে যারা কাজ করছে দীর্ঘদিন, বাঙালির সমাজ আর সংস্কৃতিকে যারা শেষ করার পরিকল্পনায় মেতে আছে বিদেশি প্ররোচনায়, তাদের কি এভাবে ছেড়ে দেয়াই হবে? বর্তমান সরকারও কি গা ভাসিয়ে চলবে ঐসব নষ্টদের মত? মানুষ কি বলতেই থাকবে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, পার্থক্য নেই খুব একটা, একদল মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করছে অন্যরা ইসলাম! আসলেই কি পার্থক্য নেই আওয়ামী লীগ আর বিএনপির? হাওয়া ভবন কৃন্দ্রিক সমাজ থেকে এ দেশবাসী কি মুক্তি পাবে না? এ নষ্ট সমাজের কি ডিজিটাল বাংলাদেশকে ধারণ করার উপযোগিতা আছে? রূপকল্প-২০২১ প্রত্যাশী এ সমাজ এখনো কেন ফেনসিডিল আসক্ত, কবে মুক্তি ঘটবে তার? ভূমি দখল, চর দখল, হল দখল, নদী দখল, টেন্ডার দখল, চাকরী দখলের এই খাই-খাই আসক্তি থেকে বের হতে না পারলে কি ডিজিটাল সময় ধরা দেবে বাঙালির কাছে?

নষ্ট আর পচা অতীতের আরণ্যক সময়ের অস্ত্রপচার করে, চলমান বৃটিশসৃষ্ট আমলাতন্ত্রের জটিল টিউমারকে অপসারণ না করতে পারলে এ রোগ ভাল হবে না এতো সহজে। কখনো দাঁড়াবে না কিংবা বেঁচে উঠবে না বাংলাদেশ নামক রোগীটি তার কঠিন অসুখ থেকে! এর জরুরী, আশু এবং অত্যাবশ্যক চিকিৎসা করতে হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন ডাক্তারকেই। এবং তা এখনই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন