সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বিশ্বে ইসলামকে ছোট করছে কারা? # ১২৫

বিশ্বে ইসলামকে ছোট করছে কারা? 
ইসলাম মানে শান্তি। ইসলামের নবী (স.) বিশ্বময় শান্তির বারতা পেঁৗছাতে পারলেও, আজকের দিনে পৃথিবীর সর্বত্র ইসলাম নিয়ে যে নেতিবাচক কথাবার্তা হচ্ছে, আমাদের মুসলমান হিসেবে উচিৎ তার জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। যদিও বলা হয়ে থাকে যে, পশ্চিমা পুঁজিবাদীরা ইসলামের নামে নানা ‘প্রপাগান্ডা’ ছড়িয়ে ইসলামকে দুনিয়ার বুকে ছোট করেছে, যে কারণে মুসলমানদের এখন নানা পরতে পরতে হোচট খেতে হচ্ছে। কথাটার মধ্যে আংশিক সত্য থাকলেও, আমাদের ‘মুসলমান’ নামধারীরা ইসলামের ক্ষতি কিন্তু কম করেনি। যদিও কট্টর মুসলিম নামধারীগণ প্রগতিশীল মুসলমানদের ‘নাস্তিক-মুরতাদ’ বলে গালি দিতে কখনো কুন্ঠা বোধ করেনা। বিশেস্নষণে দেখা যাবে, ইসলামের প্রকৃত ক্ষতি নাস্তিক-মুরতাদদের [তাদের ভাষায়] চেয়ে কট্টর মৌলবাদী ‘মুসলিম নামধারীগণই’ বেশী করেছে, যদিও তারা সব সময়ই জোর করে নিজেদের ইসলামের ‘রক্ষক’ বলে দাবী করে থাকেন, যেমন ‘হেফাজত-জামায়াত-শিবির’ নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের রক্ষক বলে সব সময়ই বলে থাকে।
 
নবী (স.) পরবর্তী খুনোখুনি বাদ দিলেও একাত্তরের দিকে তাকালে দেখি, যখন স্বাধীনতার জন্যে এদেশের কোটি মানুষ জীবনপণ সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে, তখন ইসলামপন্থী দলগুলো (হাতে গোনা কিছু বাদে) ইসলামের নামে পাকিস্তান তথা মিথ্যার পক্ষে দঁাড়ানো এবং ৩০-লাখ মানুষকে হত্যার ‘সহযোগী’ হলো, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ইত্যাদি সব অপকর্ম করলো। প্রচার প্রপাগান্ডা করলো এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ব মুসলিম জনমত মুলত আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষেই রইলো। এমনকি সৌদি আরবসহ অনেক মুসলিম দেশ আমাদের স্বীকৃতি দিলো ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন’। হায় আমাদের তথাকথিত মুসলিম বিবেক! বর্তমান ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা যখন মানুষের বাক-স্বাধীনতা, সমানাধিকারের কথা বলছেন [যা ইসলামেও স্বীকৃত], নারী অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, জনবিস্ফোরণ সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করছেন, তখন কতিপয় ধর্মব্যবসায়ী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা (২/১টি ব্যতিক্রম বাদে) অনেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে, জঙ্গীবাদের মদদদাতা হিসেবে, সহ-শিক্ষার বিপক্ষে, নারী স্বাধীনতার বিপক্ষে, জেন্ডার নীতির বিপক্ষে, নারীর ক্ষমতায়ন, যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের বিপক্ষে, নিজ সংস্কৃতি চর্চা, মাতৃভাষায় খুতবা প্রদান, সংস্কৃতি চর্চা তথা খেলাধুলা-নাচ গানের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধকে এখনো অনেক ‘ইসলামপন্থী’ ব্যক্তি অপরাধ বলে মনে করেন না। অন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতি সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক আক্রমনকে তথাকথিত এইসব ইসলামিক রাজনৈতিক দল ‘সঠিক’ বলে মনে করেন। আফগানিস্তানে যে পোশাক পড়ে ‘কোকেন’ চাষ করে আফগানীরা, তাকে অনেক মুসলিম অজ্ঞতাবসত ‘সুন্নতী’ পোশাক বলে ফতোয়া দেয় টিভি চ্যানেলে, যদিও ইসলামের নবী (স.) ও সাহাবাগণ কখনো এ পোশাক পড়েননি। জিয়াকে ‘শহীদ’ বলে বঙ্গবন্ধুকে ‘নিহত’ আখ্যা দেন তারা। বিএনপিকে ‘ইসলামের রক্ষক’ ও আওয়ামী লীগকে ‘ইসলাম বিরোধী’ দল বলে মনে করেন। 

এমনকি এদেশে আত্মঘাতী ব্যক্তিরা মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অবলীলায় গ্রেনেড বা বোমা মেরে নিজেকে ও প্রতিপক্ষকে হত্যা করে, যদিও আত্মঘাতীকে ইসলামে হারাম বলা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তথা সৌদি আরবে আমাদের মত গরিব মুসলিম রাষ্ট্র থেকে যাওয়া গরিব শ্রমিকেদের প্রতি ‘অবৈধ’ লেবার হিসেবে কাজ করার ‘অপরাধে’ নানাবিধ অত্যাচার, জেল ইত্যাদির বিধান করলেও, ইউরোপ-আমেরিকান পাসপোর্টধারী নন মুসলিমগণ সেখানে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে। মুসলমান প্রধান গরিব বাংলাদেশ পোশাকসহ তার প্রায় সব পণ্যই ইউরোপ-আমেরিকার ‘কাফের’ দেশে রপ্তানী করলেও, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো তাদের পোশাক, টুপি আমদানী করে চীন-তাইওয়ান থেকে, এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষিত মুসলমানগণ কিন্তু এই ব্যাপারে কোন কথা, আন্দোলন বা মুখ খোলেন না। ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলেই দেখা যায়, সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকেট (যা তাদের সৌদি কর্তৃপক্ষ গছিয়ে দিয়েছে) নিয়ে আশা বাংলাদেশী যাত্রীরা টিকেট কনফার্ম করার জন্যে দিনে রাতে বৃষ্টির মধ্যে লাইন দিয়ে দঁাড়িয়ে আছে, কিন্তু বিমান যাত্রীর মত সম্মানিত (!) যাত্রীদের কিভাবে তারা তুচ্ছ তাছিল্য করছে! ২/১-জন করে ভেতরে ঢুকাচেছ, বাকিরা বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজছে, রোদে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। সৌদি এয়ারের লন্ডন বা সিঙ্গাপুর অফিস কিন্তু ঢাকার মত এরূপ ‘মুরগির খোপ’ নয়, যদিও ঢাকা-জেদ্দা-রিয়াদ তাদের ফ্লাইট প্রত্যহ।

তা ছাড়া ধর্মীয় অপচয়ের ব্যাপারে আমাদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ভাইদের কোন কথা বা ফতোয়া দিতে দেখা যায়না। নবী (স.) এর আমলেও অন্যান্য নামাজসহ ঈদের নামাজও মসজিদেই পড়া হতো। এখনো মধ্যপ্রাচ্য ও সৌদি আরবে আলাদা কোন ঈদের মাঠ বা ঈদগাহ নেই। মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু আমাদের গরীব দেশে যেখানে যায়গার অত্যন্ত সংকট, সেখানে আমরা স্কুল কলেজের জন্যে আলাদা আলাদা মাঠ, আলাদা বহুবিধ স্টেডিয়াম, বছরে ২দিন প্যারেড করার জন্যে ‘প্যারেড স্কয়ার’ আর শহরসহ সর্বত্র গ্রামগঞ্জে বানিয়ে রেখেছি অসংখ্য ‘ঈদগাহ’। যেখানে বছরে মাত্র ২-দিন নামাজ আদায় করা হয়। তা কি আমরা কোন স্কুলের মাঠে, স্টেডিয়ামে আদায় করতে পারিনা? ইসলামে কি এটি অপচয় নয়? আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর সময় যখন সাংস্কৃতিক ও মানবতাবাদী কর্মীরা গান গেয়ে, নাটক করে দুর্গতদের সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে, ইসলামপন্থী ভাইয়েরা কিন্তু তখন ‘ওয়াজ মাহফিল’ ‘ইসলামী জলসা’ বা ঐজাতীয় কোন কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে আসেনা, যাতে বিপদগ্রস্থদের সাহায্য করা যায়।

গত ২২.২.১৩ তারিখ তথাকথিত ‘ব্লগার’দের নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যায়িত করে ইসলামের নামে যা করা হলো, তা কি ইসলামী কাজ? ইসলামে কি জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করতে বলেছে? দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ হলে এদের দেশপ্রেম কোথায়? কেন তারা একাত্তরে দেশের জন্য যুদ্ধ করে ঈমানী পরীক্ষা দেয়নি? তাদের দেশ কি পাকিস্তান? যদি তাই হয় তবে বাংলাদেশে তারা কেন? পৃথিবীতে বর্তমানে কোটি কোটি ব্লগার প্রত্যহ ব্লগে তাদের স্বাধীন মতামত প্রচার করছে। এ জন্য স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরের তরুণ ব্লগাররা জবাবদিহি করবে কেন? তারা কি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতামতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিংবা নিয়ন্ত্রক? সুতরাং এ দাবীতে ২২ ফেব্রুয়ারির ও পরবর্তীতে ৫ এপ্রিলের তান্ডবে আবার প্রমাণিত হলো, পবিত্র ইসলামকে কিভাবে এরা খেলনায় পরিণত করছে দিনের পর দিন।

বর্ণিত গুটি কয়েক উদাহরণ ও বলা হযনি এমন সব অসংখ্য তথ্য বিবেচনায় সাধারণ মানুষ ও নন-মুসলিম জগৎ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, বর্ণিত ইসলামপন্থীরা যে প্রগতি ও মানবিকতার বিরুদ্ধে ফতোয়া তথা ‘নেতিবাচক’ কাজগুলো করছে তা-ই বোধহয় ‘প্রকৃত ইসলাম’। যে কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ ও বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে ‘নেতিবাচক’ ধারণার জন্ম নিয়েছে ও যা ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। যে জন্যে মূলত দায়ী আমাদের বর্ণিত ধর্মব্যবসায়ী ইসলামধারী ব্যক্তিদের ‘ইসলাম পরিপন্থী কাজ ও আচরণ’। এখন অনেক মানুষই বর্ণিত ব্যক্তিদের কথার সাথে কাজের কোন মিল না পাওয়াতে তাদের পরিহার করছে ও বর্ণিত গোষ্ঠী দিনের পর দিন ইসলামের ক্ষতিই করে চলছে। যদিও মহানবীর প্রকৃত ইসলাম বিশ্বমানুষের জন্যে। আমরা কি তথাকথিত ইসলামপন্থী ব্যক্তিদের ধারাবাহিকভাবে ইসলামের ক্ষতি করতেই দেব, এদের কি প্রতিহত করবো না? ইসলামের শান্তির কথা ও পথ কি এদের কাছে পদদলিত হতেই থাকবে দিনের পর দিন? এদেশের মিডিয়াগুলোও ধর্মের নামে তাদের সমালোচনা থেকে আর কতকাল বিরত থাকবে? হায় বাঙলাদেশ! হায় বাংলাদেশের ধর্মীয় চেতনা!!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন