সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমাদের মননের ইতিবাচক বোধোদয় আর কতদূর? [ Part – 1) # ১১৫


আমাদের মননের ইতিবাচক বোধোদয় আর কতদূর? [ Part – 1)
 
ঢাকা শহরের কোথাও এখন আর চলাচলের উপায় নেই। ফুটপাথে পায়ে হেঁটে, রিক্সা, কার, অটো কিংবা বাস কোনভাবেই গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। সর্বত্র ঠাসা কেবল মানুষ আর মানুষে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, ফুটপাত মানুষে সয়লাব। এখনো কোন কোন দম্পতি ৭-৮টি করে সস্তান জন্ম দিচ্ছে নিয়মিত এ সমাজ আর রাষ্ট্রে বিনা বাঁধায়। রাষ্ট্র, সমাজ আর দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বর্ণিত দম্পতির ব্যাপারে আমাদের রাষ্ট্র, আইন এবং সাধারণ মানুষ এখনো সম্পূর্ণ উদাসীন, যেন কারো কিছু করার নেই, বলার নেই। অথচ সমস্যাটি কি রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার নয়? কবে হবে আমাদের বোধোদয়?
 
প্রত্যহ রাস্তায় বেড়োলেই দেখা যাচ্ছে, মাথায় নানাবিধ কাঁথা-বালিশ, ঘটি-বাটির বোচকা নিয়ে শয়ে শয়ে লোকের দল কোন কাজ-কর্ম না করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে ‘তাবলিগ’ জামায়াত করার জন্যে। যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা জরুরী অফিস যাত্রীরা বাসের জন্যে অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারছেন না ভীরের চাপে, নিজেদের জরুরী দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহনের কারণে, সেখানে অকর্মণ্য বর্ণিত ‘তাবলিগ ভাই-চাচারা’ দল বেঁধে নানা রুটের বাসে চেপে সিট দখল করে রাখছে, আর প্রয়োজনে কাজের মানুষেরা কাজে যেতে পারছে না। এভাবে অকাজে প্রত্যহ হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বের হওয়ার কারণে দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা ও উৎপাদনে কত ক্ষতি হচ্ছে, তার হিসেব কেউ না করে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় দিন যাপন করছে। অথচ বিষয়গুলো এখনই সক্রিয় বিবেচনায় আনতে হবে যে, অগ্রাধিকার ভিত্তিকে কে বা কাকে আমরা যানবাহন ব্যবহার করতে দেব? অফিস বা উৎপাদন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিকে, না অকাজে ঘুরে বেড়ানো অনুৎপাদনশীল এসব মানুষদেরকে? 
 
প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, ঢাকার খালগুলো ভূমি খাদকদের দখলে চলে যাওয়ার কারণে জল-নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বিধায় সামান্য বৃষ্টিতেই এখন প্রচন্ড জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশানস্থ ‘শাহজাদপুর’ খালটি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে ড্রেনেজ বিভাগ-২, ঢাকা ওয়াসা। খালের পাড়েই ঢাকা ওয়াসার চমৎকার একটি সাইনবোর্ড কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরো খালটিতে আগাছা লতাপাতায় কিভাবে ঘিরে ধরেছে, খালের একটি কালভার্টের মুখে কিভাবে ময়লা আবর্জনা জমে খালকে বন্ধ করে দিয়েছে। অপর পক্ষে ৪ নং চিত্রটি ব্যাংককের একটি ড্রেন কাম খালের দৃশ্য, যে খালে কোন আগাছা, ময়লা নেই কিন্তু সরু হলেও খালটিকে চমৎকারভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং তাতে নৌকা চলছে। শাহজাদপুর খালটি কবে কিংবা কোন্ আমলে পরিস্কার কিংবা সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে তা রীতিমত গবেষণার বিষয় বৈকি! অথচ ওয়াশার দায়িত্ব কি কেবল একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখা? কে খালটিকে সচল রাখবে? অপদখল আর ভূমিদস্যুতার কথা বললেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
 
গ্রামে এখন কর্মক্ষম শক্ত সামর্থ মানুষের খুব অভাব, গ্রামে থাকে এখন নিষ্কর্মা বুড়োরা ভিজিএফ চাল-গম কিংবা বৃদ্ধ ভাতা নেয়ার জন্যে, আর নানা রাজনৈতিক টাউট-বাটপার আর সন্ত্রাসীর বসবাস গ্রামে, যারা প্রায়ই নিরীহ গ্রামবাসীদের সালিশীর নামে ফতোয়া আর নানাবিধ শাস্তি প্রদান করে। গ্রামে ক্ষেত-খামারের জন্যে নিয়মিত ‘কামলা’ পাওয়া যায়না, কারণ সব কামলারা রিক্সা নিয়ে চলে এসেছে ঢাকায়, টাকা কামানোর ধান্ধায়। যে কারণে রিক্সা আর মানুষে ঢাকা সয়লাব, তাদের গ্রামে ফেরত পাঠানোর কোন উদ্যোগ নেই আমাদের। রিক্সা কোন সস্তা বাহন নয়, সামান্য দূরত্বেও রিক্সাভাড়া গুণতে হয় ২০-টাকা। ৫০টি রিক্সায় যে মানুষ বহন করে, তা করতে পারে মাত্র ১টি বাসে। ৫০টি রিক্সা চালাতে ৫০-জন ড্রাইভার লাগলেও, ১টি বাস চালাতে লাগে মাত্র ১-জন। ১টি বাস ৫০টি রিক্সার তুলনায় অনেক কম যায়গা দখল করে। কিন্তু মধ্যযুগীয় বর্বর আইন কানুনহীন মানুষদের মত রিক্সা পুরো ঢাকার রাস্তাকে দখল করে যে যেভাবে পারছে চালাচ্ছে। বিশ্বের আধুনিক মানুষের কাছে ঢাকার রাস্তা একটি পাগলা গারদ। অথচ বিশ্বে আধুনিক বড় কোন শহরে রিক্সা নেই। কিন্তু স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানী ঢাকাকে যে যেভাবে পারছে ব্যবহার করছে! আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না একটুও! 
 
[এর পর পর্ব-২]
 
লেখকের ফেসবুক ঠিকানা : https://www.facebook.com/DrLogicalBangal

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন