২০১৫-র বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আজকের
বাঙালির অবস্থান
:
এ মাটিতে জন্মের পর থেকেই আমি
একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করতে শিখেছি। গর্ববোধ করছি বাঙলার অপরূপ সৌন্দর্যময়
প্রকৃতির জন্যে; রক্ত দেয়া বাংলা ভাষার জন্যে; বিশ্বজনীন ‘বঙ্গবন্ধ’ু আর ‘রবীন্দ্রনাথে’র জন্যে! এদেশের ভাববাদী কবি আমাকে ভাবতে শিখিয়েছেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’ কিংবা ‘বাঙলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি
পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর’!
বাঙালি কবির এ সব ‘কথকতা’ আমার মগজ আর মননের ‘হার্ডডিস্কে’
গেঁথে গিয়ে আমাকে শিখিয়েছিল, বাংলা আর বাঙালিই বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ, যে জন্যে আমি গর্ববোধ করতাম সব সময় (এখনো করি কি?)। কর্মজীবনে এসে বিশ্বের অনেক দেশ, আর জাতির সঙ্গে
পরিচয়ের সুযোগ ঘটেছে আমার। জানতে চেষ্টা করেছি বিশ্বের অন্যান্য জাতির সঙ্গে
বাঙালির মিল-অমিলের চিত্র, আমাদের ও তাদের ইতিহাস আর গৌরবের
কাহিনী, তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখার
চেষ্টা করেছি, বাঙালি হিসেবে বিশ্বে আমার দেশ, জাতি ও নিজের অবস্থান কোথায়? প্রাগৈতিহাসিক
কাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত চলুন বাঙালিকে একটু পরিমাপ করার চেষ্টা করি যুক্তির
কষ্টিপাথরে!
আজ পর্যন্ত বিশ্বে আবিস্কৃত
প্রাচীন সভ্যতায় কোন পর্বেই বাঙালির কোন নিদর্শন খুঁজে পায়নি কেউ। পাথরের ছাপ, ফসিল, ক্যামব্রিয়ান যুগ, মেসোজাইক যুগ,
সিনোজাইক যুগ, প্যালিওসিন যুগ,
ইওসীন যুগ, ওলিগোসিন যুগ,
গ্লেশিয়াল যুগ ও সর্বশেষ
প্লাইওসিন যুগে বাঙালির কোন অস্থিত্ব নেই। বিলুপ্ত গন্ডোয়াল্যান্ডে কোন বাঙালিকে
খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাইমেটিজ,
অস্ট্রোলোপিথীসিন, পিথিকানথ্রোসাস ইরেক্টাস, হোমোহাবিলিস, নিয়্যানডারটাল,
ক্রোম্যানিও মানুষের মধ্যে আমি বা
আমার পূর্ব পুরুষ কোথাও নেই। প্রস্তর যুগে, তাম্র যুগে ও
ব্রোঞ্জ যুগেও কোথাও খুঁজে পাইনি নিজের পূর্ব পুরুষের রক্তধারাকে।
মানুষের জাতি গোষ্ঠী তথা গরিলা, শিম্পাঞ্জি, গিবন, ওরাং ওটান, ইয়েতি থেকে পর্যায়ক্রমে বিবর্তিত
মানুষের রূপে বাঙালি নেই। প্রাচীন চিন, সিন্ধু, টাইগ্রিস-ইউফ্রিটিসের সুমেরু সভ্যতা, আসিরিয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, মায়ান সভ্যতা,
মাচ্চু-পিচু সভ্যতা কোথাও কি
খুঁজে পাই আমার স্বজাতি তথা বাঙালিকে? নৃতাত্ত্বিক
বিচারে মঙ্গোলিয়, নিগ্রয়েড, ককেশীয়, অস্ট্রালয়েড ও রেড ইন্ডিয়ানের
মধ্যে কি আছে বাঙালির অকৃত্রিম রক্ত পরিচয়? প্রাচীন যুগে
যখন মেডিটরিয়ান, প্রোটো-ড্রাডিভিয়ান, আলপাইন, ককেশিয়ান-নর্ডিক, জিপশী, ব্যুশম্যান, বেদুঈন মানুষেরা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছিল খাদ্য আর নিরাপদ আশ্রয়ের
খোঁজে, তখনও বাঙালির খোঁজ নেই কোথাও! নিজ
ঘরে বাঙালি তখন কি বিরত্বগাঁথা রচনা করেছিল?‘
এবার দেখা যেতে পারে বিশ্বের
ধর্মীয় &&বচারে বাঙালির অবস্থান! প্রাচীন
ব্যাবীলনীয় ধর্ম, মায়ানদের উদ্ভাবিত ধর্ম, কেলটিক ধর্ম,
প্রাচীন অ্যাজটেক-কানেনাইট-চৈনিক
ধর্ম, মনি ধর্ম, বৃটিশ-স্কটিশ-আইরিশ এবং ওয়েলস এর প্রাগৈতিহাসিক দেবদেবীর ধর্ম, প্রাচীন মিশরের ফারাওদের ধর্ম, নরওয়ের
দেবতাবাদ, গ্রীস ও রোমের প্রাচীন জিউস
কেন্দ্রিক ধর্ম, পার্শী ধর্ম ও জরথুস্ট্র, শিন্টো (শিন-তাও) ধর্ম, কনফুসিয়াস ধর্ম, তাও ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম (গৌতম বুদ্ধ কি বাঙালি
ছিলেন?), জৈন ধর্ম, আর্যদের সনাতন ধর্ম, শিখ ধর্ম, ইহুদী ধর্ম, খ্রীস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, শিয়া ধর্ম, বাহাই ধর্ম, আহমদিয়া বা কাদিয়ানী মতবাদের
কোথাও বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যায়না। বর্ণিত ধর্মীয় প্রধান ব্যক্তিত্বের মধ্যে কেউই
বাঙালি ছিলেন বলে ধারণা করা যায়না কিংবা উপর্যুক্ত ধর্মের কোন বাণী তথা
ধর্মগ্রন্থের ভাষাও বাংলা নয়;
যদিও চৈনিক, জাপানী, হিব্রু, এ্যারামিক, আরবী, প্রাকৃত, সংস্কৃত, পালি, এমনকি পাঞ্জাবী ভাষায়ও ধর্মগ্রন্থ
রচিত হয়েছে।
কোন দেবদেবী, রসুল-পয়গাম্বর বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেননি, বাংলার পাহাড় পর্বতে ধ্যান বা বসবাস করেননি কিংবা মৃত্যুবরণও
করেননি। আমাদের বাংলায় কোন আসমানী কিতাব নেই। পরকালীন কোন স্বর্গ-নরক, জান্নাত-জাহান্নামের ভাষাও বাংলা হবে বলে শোনা যায়নি। স্বর্গ বা
নরকের কোন অংশও বাংলায় অবস্থিত নয়। জিউস, যিহোবা, মাদার মেরী, রাবণ, মহাদেব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইসা-মুসা-দাউদ-নুহ, আদম, হাওয়া কারো বাড়িই বাংলা অঞ্চলে
ছিলনা কিংবা এদেশে বেড়াতেও আসেননি। জানা যায়, হযরত আদম (আ)
পতিত হয়েছিলেন সিংহলে এবং বিবি হাওয়া জেদ্দায়, আর হযরত নুহ
(আ) নবীর নৌকা ঠেকেছিল তুরস্কের পাহাড়ে। প্রায় সকল নবী-পয়গাম্বরের জন্ম
মধ্যপ্রাচ্যে বা পশ্চিম এশিয়ায়। মান্নাহ ও সালওয়া নামক বেহেসত্মী খাবারও পতিত
হয়েছিল বনি ইসরাইলীদের জন্যে,
কোন বাঙালি যার কোন হিস্যা পায়নি।
কৈশাল পর্বত, সিনাই পাহাড়, তুর পাহাড়, হেরা পর্বত, জবলে রহমত কোনটিই বাংলায় নয়। জান্নাতে ডুমুর, আঙুর, জলপাই শ্রেণির ফল স্থান পেলেও; বাংলার লিচু,
আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, ডাব থাকার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রাচীন অলিম্পিক থেকে বর্তমান
খেলাধুলো তথা সাঁতার, দেঁৗড়, নৌকা-বাইচ, নাচ-গান, বক্সিং, ফুটবল, জাম্প, ফেন্সিং, গদাযুদ্ধ, জ্যাভেলিন, বর্শা নিক্ষেপ,
সাইক্লিং, মোটর-রেস, ঘুড়ি-ওড়ানো, তাস-দাবা খেলা,
পাশা খেলা, পিংপং, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, সুটিং, ব্যাডমিন্টন, জিমন্যাস্টিক,
বাস্কেটবল, ভলিবল, রাগবী, পোলো, গলফ, স্কেটিং, বোট-রেস, স্কি কোথাও খুঁজে পাইনা বাঙালিকে বীরত্বের প্রতীক হিসেবে। চলমান
লন্ডন অলিম্পিকসহ প্রায় সকল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাঙালিকে খুঁজতে নিতান্তই
কষ্ট পেতে হয় আমাদেরকে। খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় সবার পেছনে, সবার শেষে!
প্রাচীন মধ্যযুগীয় চিকিৎসা এবং
আধুনিক এ্যানাটমি, শরীর বিদ্যা, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, দাঁত, চোখ, কান, রোগ, জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস, প্রতিষেধক, ফুসফুস, বৃক্ক, হার্ট ও মস্তিস্ক,
স্নায়ুতন্ত্র, অন্তঃক্ষরণতন্ত্র,
থাইরয়েড গ্রন্থি, এ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, এন্টিবায়োটিক, সাজার্রী পদ্ধতি,
ভিটামিন, রেডিয়াম, সিজারিয়ান কোথায় আছে বাঙালি? চিকিৎসাবিদ গ্রিক হিপোক্রিটাস থেকে গ্যালেন, ইবনে সিনা, হ্যানিমান, গ্যারাসেলসাস,
জনসন, লুই পাস্তর, লিস্টার, কক, জেনার, রস, ফ্লেমিং, (কালাজ্বরের ব্রক্ষ্মচারী এদেশের), সিমসন, রন্টজেন, কার্টিয়ের, জেমস কুক, হপকিনস্, ক্যুরি, ডিউনা, নাইটেংগেল, মার্কোনী, লিপম্যান, ব্রাউন, আইনস্টাইন, হফ, রাদারফোর্ড, জুলিওকুরি, রস, জেমস ওয়াট, স্টিফেনসন, নিউটন, গ্রাহামবেল, এডিসন, পাস্তর, ফ্লেমিং, রাইট, বেয়ার্ড, রবার্ড গডার্ড,
ওপেনহাইমার; ইউনানী, আয়ুের্বদিক, তিববীয়া, এ্যালোপ্যাথিক, হোমিও, আকুপাংচার, চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি কোথাও বাঙালি নেই। প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে বাঙালি তাহলে কি করলো?
বিশ্বের প্রথম ধাতব মুদ্রার
আবিস্কার, কাগজী নোট, জলছাপা, ডলার, পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন, ফ্রাঁ ইত্যাদি আবিস্কার করেন কারা? বিশ্বের জীন তত্ত্ব বিদ্যা, চা-কফি, সফট ড্রিঙ্ক,
হার্ড ড্রিঙ্ক, খনিজ সম্পদ, লোহা, তামা, তেল, ম্যাঙ্গানিজ,
অভ্র, ইউরেনিয়াম, স্বর্ণ ব্যবহার কাদের কৃতিত্ব? এখন কারা সমুদ্র তলদেশে গিয়ে গবেষণা করছে প্রতিনিয়ত? সমুদ্রের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য, সম্পদ, জীবন্ত বাগান,
প্রবাল, পর্বত শ্রেণি,
মাছ কারা বের করছে? ডারইউনের তত্ত্বে আমরা আছি কি? নারদ মুনি নাকি
উড়ন্ত ঢেঁকি যাতায়াতে ব্যবহার করতেন, দুর্গার বাহন
ছিল সিংহ, শিবের ষাঁড়, শীতলার গাধা,
গণেশের ইঁদুর, লক্ষ্মীর পেঁচা,
সূর্যদেবের সোনার রথ, তার কোনটিতেও বাঙালি ছিলনা। এমনকি প্রাচীন সাহিত্য ঈশপ, এ্যারাবিয়ান নাইটস এর গল্পেও। আমরা বাঙালিরা স্বাধীনতা পেয়েছি
মাত্র সেদিন মানে ১৯৭১-এ, যখন বিশ্বের প্রায় দেশই তাদের
স্বাধীনতার শ’ বা হাজার বছর উৎযাপন করছিল। কেবল
উত্তরাধিকার সূত্রে বিশ্বের একমাত্র ‘তালিপাম গাছ’ টি পেয়েছি আমরা! আমাদের ভাষাটিও একাত্তরের আগে রাষ্ট্রভাষা ছিলনা
কখনোই! এখন কাগুজে রাষ্ট্রভাষা হলেও, দেশের অধিকাংশ
কাজকর্ম হয় অন্য ভাষায়।
দার্শনিক পিথাগোরাস, হিরাক্লিটাস,
সক্রেটিস, এ্যারিস্টোটল,
ইবনে রুশদ, বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, কোপার্নিকাস, নিউটন, গ্যাগারিন, ভ. তেরেস্কোভা,
অলড্রিন, আর্মষ্ট্রং, জুলভার্ন, জেমস ওয়াট, গ্যালভানি, ভোলটা, ফ্যারাডে, মোর্স, সিমেন্স, গ্রাহামবেল, ওয়েস্টিংহাউস, রকেট, কৃত্রিম উপগ্রহ, চাকা, ইঞ্জিন, ট্রেন, ট্রাম, সাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি, রথ, উটের গাড়ি, মোটর, ডিজেল ও প্রেট্রোল ইঞ্জিন, বাষ্পীয় ইঞ্জিন,
রকেট ইঞ্জিন, টমথাম ইঞ্জিন,
পাতাল ও মেট্রোরেল, মনোরেল, রোপওয়ে, সমুদ্রগামী পালতোলা নৌকা (কলম্বাসের জাহাজ), জাহাজ, গন্ডোলা, ডুবো জাহাজ, পরমাণু শক্তিচালিত জাহাজ, এলিভেটর, এক্সেলেটর, মাইক্রোস্কোপ,
দুরবীন, মহাকাশযান, এক্সরে, রাডার, বিমান, রবোট, জ্বালানী তেল, ইলেকট্রিসিটি কোথাও কি বাঙালিকে কেউ খুঁজে পাবে এ বিশ্বে? তবে এক জগদীশ চন্দ্র আমাদের মধ্যে ভুলক্রমে হলেও জন্ম নিয়ে গাছের
জীবন আবিস্কার করে গেছেন! এটি কেন হলো, একটি চমৎকার
গবেষণার বিষয় বটে!
খনিজ, হীরা, তামা, সোনা, রূপা, লোহা, টিন, ইউরোনিয়াম, কয়লা, মহাকাশবিদ্যা,
ছায়াপথ, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, আলোকবর্ষ, নক্ষত্রের গতি,
জন্ম-মৃত্যু, ব্লাকহোল, কোয়াসার, মানমন্দির, দুরবীণ, মহাকাশযান সয়ুজ,
এ্যাপলো, ভাইকিং, পাইওনিয়ার, বাতাস, আলো, তাপ, সূর্যরশ্মি, অরোরা, মেঘ, শিশির, কুয়াশা, টাইফুন, সাইক্লোন, হ্যারিকেন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, স্রোত, ঢেউ, বিদ্যুৎ-বজ্র, সুয়েজ, পানামা, আকাশ ছোয়া বহুতল ভবন, বুর্জ আল আরব, সমুদ্রে সেতু,
যুদ্ধের অস্ত্র, জল বিদ্যুতের বাঁধ, ট্যাঙ্ক, বস্ত্র শিল্প,
পাউরুটি তৈরী কোথায় আছে বাঙালি? পদ্মা সেতু কি বাঙালি তৈরী করতে পারবে? যেমনটি চীনারা করেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেতু তাদের সমুদ্রে নিজেদের
অর্থে, নিজেরাই!
প্রাচীন লিপি ও অক্ষর, সিন্ধু অববাহিকায় চিত্রলিপি, কিউনিফর্ম, ফিনিশীয় লিপি থেকে পরবর্তীতে ইউরোপীয়ো লিপি, খরোষ্ঠী বা ব্রাহ্মী লিপি, চীনা লিপি ‘চিয়া কু ওয়েন’,
সুমেরু সভ্যতার কিউনিফর্ম, মিশরীয় কীলক লিপি,
নীলনদের পেপিরাস থেকে অত্যাবশ্যক
কাগজ, কাঠের পাটাতনে মোমের সাহায্যে
গ্রীক ও রোমানদের লিপি, বই, মুদ্রণ, টাইপ, লাইনোটাইপ, প্রেস, ছবি, ছবি মুদ্রণ, জার্মানীর গুটেনবার্গের ছাপাখানা, চীনের প্রথম ছাপাখানা, ১৭৯৮ সনে ফরাসী
এতিয়েন দুপেঁর ও বৃটিশ স্যানহোপ ছাপার লোহার যন্ত্র তৈরীকরণ, মাদ্রাজে কেরী কর্তৃক মুদ্রণের কাজ শুরু ইত্যাদি বিশাল কর্মযজ্ঞে
বাঙালি কই? পর্যটক ম্যাগেলান, মার্কোপলো, হিউয়েনসাং, ইবনে-বতুতা, বারথোলোমিউ, ভাস্কোদাগামা,
ড্রেক, কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, হাডসন, স্মিথ, জেমস ব্রুস, লিভিংস্টোন, ফ্রান্সিস বার্টন,
ভাইটাস বেরিং, ফ্রাঙ্কলিন, আমারসেন, অক্সলি, কানিংহাম, ক্যা.-স্টাট,
আয়ার, লিকহার্ড, জ্যাকি, স্টুয়ার্ট, বার্ক, ডি লং, ভন বেলিংহাউসেন, ক্যাপ্টেন স্কট কারো নাম আর চেহারায়-ইতো বাঙালিয়ানা নেই। এ সময় বাঙালি কি করেছিল তার দেশে? একটি সমুদ্রগামী জাহাজও কি বাঙালি বানাতে পারেনি তখন? যেটি নিয়ে আমাদের প্রাচীন কবি কাহ্নপা, কুক্কুরীপা, ভুসুকুপা কিংবা দন্ডীদাসেরা সোজা
দক্ষিণে চলে যেতে পারতো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড
কিংবা তাসমানিয়ায়? সমুদ্র তীরে বসবাস করেও, সমুদ্রকে জয় করতে পারলো না বাঙালি! হায়!!
ভরতমুটির নাট্যশাস্ত্র, সঙ্গীতের বেহালা-গিটার-ড্রাম, অক্ট্রেষ্ট্রা, আমির খসরু, তানসেন, মোৎসার্ট, বেটোফেন, যদুভট্ট, তাল, লয়, সুর, বীণা, তানপুরা, সেতার, স্বরোদ, রুদ্রবীণা, এসরাজ, সারেঙ্গী কোথায় বাঙালি? হিমালয় বিজয়ী
হিলারী-তেনজিং, সুরঙ্গ বা ট্যানেল, খাল, পথ, ডাকঘর, ডাকটিকেট, ফ্রাঙ্কিং মেশিন, ডাকবাক্স, পোস্টম্যান, মানি অর্ডার,
এয়ারমেইল, কুরিয়ার, চিঠি সর্টিং মেশিন এদের কারো
মধ্যে কি বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যাবে? সময় গণনা, টাইম মেশিন, দিন রাত্রি, দিন-মাস, সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, বছর, সন, মাস, চন্দ্র-সৌর মাস,
ঘড়ি আবিস্কার, বালুঘড়ি, বিগবেন, ছবি বা ফটোগ্রাফি,
ছায়াকে চিরস্থায়ী করা, ওয়েজউড, নীপসে, দাগের, ফ্লিম, ছবি ডেভলপ, ক্যামেরা, আলো, লেনস, শাটার, এক্সপোজার, ইস্টম্যান, ক্যামেরা, ডিজিট্যাল ছবি,
মেমোরী কার্ড, মোবাইল, সিম এদের ইতিহাসে কোথায় বাঙালির
অস্থিত্ব? মানুষের সভ্যতার অপরিহার্য পোশাক, ইউরোপের সার্ট প্যান্ট, হ্যাট, জুতা, বেল্ট, ঘড়ি, টুপি, ম্যাজিক, সিনেমা, নাটক, অপেরা, ব্যালে, গান, কার্টুন, ৩ডি, ডিজনীল্যান্ড,
ব্যালে-ক্যাবারে, ভরতনাট্যম, কথাকলি, মণিপুরী, কত্থক, কুচিপুড়ি, ওড়িশি, উদয়শংকর কারো মধ্যেই বাঙালিকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি? হায়, বনে বাদারে থেকে বাঙালি নাচতেও
শিখলো না?
প্রাচীন বিশ্বসাহিত্য, পুরাণ, উপপুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, কালিদাস, ইলিয়াড, অডিসি, ফেরদৌসি কোথায় আছে বাঙালি? চর্যাপদ কি বিশ্বের অন্যতম কোন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কর্ম? আবার সেটিও দাবী করছে নেপালীরা তাদের আদি ভাষা বলে! পাওয়াও গেল
নেপালে! তাহলে বাঙালি কি কিছুই সংরক্ষণ করেনি তার ঘরে? অবাক কান্ড! প্রাচীন আর মধ্যযুগে বাঙালির কোন গদ্য সাহিত্যও নেই!
আরবী, ইরানী, ঈশপের গল্প, মহাকাব্য, গ্রীক নাটক, মিশরীয় সাহিত্য, রোমান সাহিত্য,
হিব্রু সাহিত্য তথা তালমুদ, আরবী সাহিত্য,
এ্যাংলো স্যাকসন থকে এ্যাংলো
নর্মান ইংরেজি সাহিত্য, চসার তথা ইংরেজি রেনেসা যুগ, সেক্সপিয়র, মার্লো, বেন জনসন, বেকন, মিলটন, ড্রাইডেন, পোপ, সুইফট্, অলিভার, গোল্ডস্মিথ, গিবন, ওয়ার্সওয়ার্থ, টেলার, কোলরিজ, ওয়াল্টার স্কট,
শেলি, জন কিটস, বায়রন, জেন স্টেন, টেনিসন, ব্রাউনিং, হার্ডি, স্টিভেনসন, এইচ.জি ওয়েলস, ফরাসী সাহিত্যে শার্লেমেন, ফ্রয়সার্ট, কমিন্স, দেকার্ত, প্যাসকেল, মলিয়ের, রাসিন, কর্নে, ডিডেরো, মনটেসকিউ, সেভিনে, ফঁতেন, ভলতেয়ার, রুশো, মারশে, কোঁতে, ভিক্টর হুগো,
অন্যান্য বিশ্ব সাহিত্যে লুথার, ক্লপস্টক, লেসিন, গ্যেটে, মমসেন, ফন শিলার, হাইনরিখ হাইনে, টমাস মান, জ্যাকব গ্রিম, সুইডেনবার্গ,
লিনিয়াস, এ্যানডারসন, ব্রান্ডেস, নাট্যকার ইবসেন,
বিয়ারস্টারস, সি উন্ডুসেট,
সেলমা লাগেরলব, ফ্রাঙ্কলিন, কুপার, এ্যালান পো, এমারসন, থোরো, মিলভিল, হুইটম্যান, লংফেলো, লোয়েল, হোমস, প্রেসকট, আর্ভিং, হথর্ন, মার্ক টোয়েন, ও’হেনরী, ডিকেনসন, সিনক্লেয়ার, পার্লবাক, হেমিংওয়ে, পুশকিন, নিকোলাই গোগোল, টলস্টয়, দসত্মকয়েভস্কী, আন্তন চেখভ, ম্যাক্সিম গোর্কী, মিখাইল সলোকভ,
প্যাসত্মারনাক, মায়াকোভস্কী,
চীনা ও প্রাচ্য সাহিত্যিক ও
দার্শনিকদের মধ্যে কনফুসিয়াস,
ফোবুকি, তুফু, পোচিনই, সুমাকুয়াং, কোজিকি, কিনো সুতরাই,
ওকুনি-দের যখন জয়জয়কার, তখন বাঙালি কই?
বাঙালির একমাত্র মহাকাব্য ‘মেঘবাদবধ’ কি প্রকৃত অর্থে একটি পূর্ণাঙ্গ
মহাকাব্য? (হায়, যদি আমাদের রবীন্দ্রনাথ জন্ম না হতো, তবে কোথায়
থাকতাম আমরা!) ৩ হাজার বছর আগে নাটক মঞ্চস্থ হতো এথেন্সের এ্যাক্রোপলিসে, তখনই নাট্যালয় স্থাপন ও অভিনয় শুরু গ্রীসে। ভারতে সংস্কৃত নাটক হতো
আজ থেকে ২-হাজার বছর আগেও। ১৪০০ সনে ইতালীয় ও রোমানরা নাটক মঞ্চস্থ করে তাদের
দেশে। তারা মাস্ক, অপেরা, ব্যালের প্রবর্তন করে ঐ সময়। সতেরো শতকে ফ্রান্সে মলিয়ের
প্রহসন-নাটকের সয়লাব সৃষ্টি হয় সর্বত্র। আর বাঙালি! ১৮৫৮ সনে কোলকাতায় বৃটিশদের
উৎসাহে বেলগাছিয়ায় প্রথম থিয়েটার প্রদর্শিত হয়।
এবার বিদ্যালয় তথা স্কুল। প্রাচীন
সুমেরুতে বহু স্কুল ছিল। গ্রীসে প্লেটো, সক্রেটিস, এরিস্টটল আমলে বহু স্কুল ছিল প্রকৃতির মধ্যে। মিশরে ফারাওদের আমলে
পুরোহিতরা শিশুদের শিক্ষা দিত ‘পবিত্র স্কুলে’। বৌদ্ধযুগে ঋষিরা বিক্রমশীলা, তক্ষশীলা ও
নালন্দায় শিশুদের শিক্ষা দিতেন। ইতালী ও জার্মানীতে মধ্যযুগে আবাসিক গ্রামার স্কুল
প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম শতাব্দীতে রোমে ‘কুইনটিলিয়াম’ নামে ‘বক্তৃতার স্কুল’ চালু হয়। জার্মান ফ্রবেল কিন্ডারগার্টেন স্কুল, এ্যান্ডু বেল মন্টিরিয়াল পদ্ধতি, ড. মারিয়া
মন্তেসরি পদ্ধতি, বৃটেনের কেন্টে বোরস্টাল স্কুল, ফ্রান্সে ব্রেইল স্কুল, হেলেন কেলার
মূক-বধির স্কুল প্রতিষ্ঠা বা প্রবর্তন করেন ধাপে
ধাপে। কিন্তু বাঙালির স্কুল তথা শিক্ষা পদ্ধতি কি ছিল? জানেন কি কেউ?
টোল বা পাঠশালার প্রাচীন ঐতিহ্য
কি?
বিশ্বনেতার কাতারে নেপোলিয়ান, সিজার, অরেলিয়াস, কনস্টানটাইন,
মাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি,
কাভুর, মুসোলিনি, হিটলার, শার্লমেন, লুই, দ্যাগল, আইভান টেরিবল, পিটার দ্যা গ্রেট,
হানিবল, স্টালিন, লেনিন, ইসাবেলা, চার্লস, রিভেরা, ফার্দিনান্দ, ফ্রাঙ্কো, বিসমার্ক, কাইজার, উইলিয়াম, জন, রিচার্ড, হেনরী, এলিজাবেথ, ফিলিপ, ক্রমওয়েল, নেলসন, ভ্যালেরা, ব্রুস, মেরী স্টুয়াট, ভসা, থেরেসা, রাণী ক্রিস্টিনা,
বার্নাদোত, কোপার্নিকাস,
ফিলিপ, রেমব্রান্ডটু,
মার্শাল টিটো, ওমর খৈয়াম, নাদিরশাহ, আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী, খলিফা হারনুর রশীদ, আল মামুন, সুলতান মাহমুদ,
বাবর, আকবর, শেরশাহ, শাহজাহান, লর্ড কার্জন, কামাল পাশা, ড. সুকর্ন, কর্নেল সুহার্তো,
হোচিমিন, জর্জ ওয়াশিনটন,
আব্রাহাম লিংকন, হাইলে সেলাসি,
স্টালিন, রুজভেল্ট, চার্চিল, উড্রো উইলসন,
কেনেডী, বলিভার, রাজা অশোক, আলেকজান্ডার,
রাজা হর্ষবর্ধন, গ্যারিবল্ডী,
ভিক্টর ইমানুয়েল, ট্রটস্কী, মাওসেতুং, লেনিন, ম্যান্ডেলা যখন তার জাতিকে ঘুরিয়ে
দেন প্রচলিত ধ্যান-ধারণা আর বিশ্বাস থেকে, তখনো বাঙালিকে ‘রবীন্দ্রনাথ’
কিংবা ‘বঙ্গবন্ধু’-ও ঘোরাতে পারেননি কোনভাবেই! তারা
দু’জনে উন্নয়নের কোন মন্ত্রও দিয়ে
যেতে পারেননি বাঙালিকে, যে কারণে বাঙালি চলছে বাঙালির
মতই! দুর্নীতির সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে, আর মারামারি
করছে নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত!
একুশ শতকের কিছু অত্যাবশ্যক
আবিস্কারের দিকে তাকাই, দেখি সেখানে আমাদের তথা বাঙালির
অবস্থান কি? নিচের আবিস্কার ও আবিস্কারকগণের
মধ্যে বাঙালি কেউ আছে কি একটু খুঁজে দেখুন? দেখুন
পর্যায়ক্রমে বিশ্ব আবিস্কারের তালিকা যথা বসন্ত টিকা-এডওয়ার্ড জেনার, জলাতঙ্ক প্রতিষেধক-লুই পাস্ত্তর, জিডি
ফারেনহাইট-থার্মোমিটার, লায়েনেক-স্টেথোস্কোপ, জেড. জানসেন-মাইক্রোস্কোপ, এক্সরে-রঞ্জেন, গর্ডন গল্ড-লেজার,
ওয়াটসন ওয়াট-রাডার, ইন্টারনেট-বার্নারস লী, এইচ.ক্যারিয়ার-এসি, হুইলার-ইলেকট্রিক পাখা, এডিশন-ইলেকট্রিক
বাতি, জন গোরি-রেফ্রিজারেটর, স্পেনসার-ওভেন,
বুনসেন-গ্যাস বার্নার, মারডচ-গ্যাস লাইট,
জন ওয়াকার-দিয়াশলাই, ফিশার-ওয়াশিং মেশিন, বার্থলেমি
থিমোনিয়ার, জিপার(চেইন)-জাডসন, ইলেকট্রিক ইস্ত্রি-ডব্লিউ সিলি, কার্পেট
ক্লিনার-বিসেল, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার-স্পেংলার, টোস্টার-স্ট্রাইট,
সেফটি রেজার-কেসি জিলেট, সেফটি পিন-ও.হান্ট, সিমেন্ট-যোসেফ
এ্যাসপিডিন, কোকাকোলা-পেমবার্টন, জেনারেটর-ভ্যানডি গ্রাফ, ট্রান্সফর্মার-স্টানলি, ডায়নামো- মাইকেল ফ্যারাডে, ব্যাটারী-ভোল্টা, রিচার্জেবল ব্যাটারী-জি প্লান্টে, পাওয়ার
লুম-কার্টরাইট, কটনজিন-হুইটনি, শস্যকাটা যন্ত্র-ম্যাককর্মিক, ঘাস কাটার-ইবি
বাডিং, ডিনামাইট-আ.নোবেল, ট্যাঙ্ক-সুইন্টন,
মেশিনগান-গ্যাটলিং, পিস্তল-এস কোল্ট,
সাবমেরিন-বুশনেল, অক্সিজেন-প্রিস্টলি, ব্যাকটেরিয়া-লিউয়েনহুক, এইচআইভি ভাইরাস-মন্টেগনিয়ার, কৃত্রিম
হৃদপিন্ড-কে.জার্তিক, ক্লোনিং-উইলমুট, পেনিসিলিন-আ.ফ্লেমিং, পোলিও
টিকা-এডওয়ার্ড সক, প্লে-রাইট ব্রাদার্স, হেলিকপ্টার-ইগর সিকোরস্কি, রকেট-গডার্ড, স্পেসশিপ-হেনরি গিয়ার্ড, বেলুন-মন্টগলফিয়ার, প্যারাসুট-ব্লানচার্ড, সাইকেল-ম্যাকমিলান, মোটরসাইকেল-ডেমলার, মোটরগাড়ি-কার্লবেঞ্জ, টায়ার-ডানলপ,
ডিজেল ইঞ্জিন-রুডলফ ডিজেল, স্টিম ইঞ্জিন-জেমস ওয়াট, রেল
ইঞ্জিন-স্টিফেনসন, লিফট-ওটিস, স্কেলেটার (চলন্তসিড়ি)-নাথান এমস, রেডিও-মার্কনী, টিভি-বেয়ার্ড,
টেলিফোন-গ্রাহামবেল, মোবাইল ফোন-বেল কোম্পানী, টেফিগ্রাফ-মোর্স, ফনোগ্রাফ-এডিসন,
টেপরেকর্ড-পালসেন, পিয়ানো-ক্রিস্টোফরি, ভিডিওগেম-বুশনেল, লাউডস্পিকার-রাইস-কেল্লগ, মাইক্রোফোন-বার্লিনার, এলপি রেকর্ড-গোল্ডমার্ক, অডিও
ক্যাসেট-ফিলিপস, ভিডিও ক্যাসেট-সনি, সিডি-আরসিএ কোম্পানী(আমেরিকা), ভিসিডি-ফিলিপস, রিমোট কেন্ট্রোল-ন. তেসলা, ক্যামেরা-জর্জ
ইস্টম্যান, ক্যালকুলেটর-সি ব্যারেজ, কম্পিউটার-হোয়াইট আইকেন, ল্যাপটপ-সিনক্লেয়ার, ক্যাশ রেজিস্টার-জ. রিট্টি, টাইপ
রাইটার-সোলস, পেন্ডুলাম ঘড়ি-হাইজেনস, চশমা-ফ্রাঙ্কলিন,
কণ্ট্রাকলেন্স-কে তুহলি, প্রিন্টিং প্রেস-গুটেনবার্গ, ব্রেইল প্রিন্টিং-ল.ব্রেইল, টেলিস্কোপ-গ্যালিলিও গ্যালিলি, কলম-ওয়াটারম্যান, বলপেন-জন লাউড,
ফটোকপিয়ার-কার্লসন।
উপর্যুক্ত তালিকায় একজনও বাঙালি
খুঁজে পাইনি নিজে একজন বাঙালি হয়েও। হায়! বাঙালি কি এভাবেই কাল কাটাবে নিজের
তথাকথিত গৌরবের গান গেয়ে? আজকের বিশ্ব যখন উন্নয়নের ছায়াপথে
দৌঁড়াচ্ছে চরমতম গতিতে, তখনও বাঙালি ঘুরে বেড়াচ্ছে তার
আজন্ম লালিত প্রিয়তম স্বদেশ ভূমিতে একটি ‘দুষ্টচক্রের
ভেতরে’, যে দেশটি বাঙালি ছেড়ে যায়নি কখনো
অন্য জাতির মতো। নিজের দেশে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা জাতিটি কি তার দেশকে ভালবেসেছিল
কখনো সত্যিকার অর্থে? যদি ভালবেসেই থাকে, তবে তার দেশ আর মানুষের এতো দুরবস্থা্ কেন? বাঙালির এখনই উচিত, তার নিজের
মুখকে অন্তরের আয়নায় গভীরভাবে প্রত্যক্ষণ এবং তার ক্লেদাক্ত মুখের বন্ধুরতাকে
বিনাশের মহৌষধ আবিস্কারের সর্বাত্মক চেষ্টা!