রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ঢাকার সড়কে অসহনীয় যানজট কি মেধাহীনতার পরিচায়ক? # ১০১

ঢাকার সড়কে অসহনীয় যানজট কি মেধাহীনতার পরিচায়ক?
;
পৃথিবীর অনুন্নত উন্নয়নশীল আর উন্নত অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করেছি আমি। কিন্তু ঢাকার মত যানজট কোথাও দেখিনি। বাংলাদেশের মত জনবহুল ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুর বা তাইওয়ানে এমন যানজট নেই। একজন সচেতন নাগরিক হিসবে নানাভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছি এ তীব্র যানজটকে।
বিস্ময়কর ব্যাপারে সড়ক ড্রাইভার ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কিভাবে যানজট সৃষ্টি করছে তা বিস্ময়ের ব্যাপার।
;
১। ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা আমেরিকান দূতাবাসের সামনের রাস্তায়ই মাত্র ২০/৩০ মিটার উত্তর পাশে সিটি কর্পোরেশন একদম প্রধান সড়কে (প্রগতি সড়ক) নির্মাণ করেছে বিশাল ডাস্টবিন তথা "ময়লালয়: ময়লার স্তুপ প্রধান সড়কে এতো বেশি যে সড়কেও অর্ধেকেও বেশি স্থান দখল করে রেখেছে ঐ ময়লার স্তুপ (ছবি সংযুক্ত)। উত্তর বাড্ডার একটু পরেই একই টাইপের বিশাল ময়লাগার ওখানেও সড়ক ৬০% দখল করে আছে একই ময়লা।
: 
তা ছাড়া হাজারো সমস্যায় আক্রান্ত বাংলাদেশ। সমস্যার যেন আর অন্ত নেই। জনসংখ্যা, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ইত্যাদি সপ্তপদ সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশ তথা ঢাকা মহানগরীর মানুষ এখন যে সমস্যাটি নিয়ে ‘যারপরনাই’ আক্রান্ত তা হচ্ছে, ‘যানজট’। ‘যানজট’ এখন আমাদের সময়, মানসিকচাপ, অর্থ ইত্যাদি নানাবিধ কষ্ট দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলছে। বলতে গেলে কোন রাস্তা দিয়েই এখন আর সহজে চলাচলের উপায় নেই। প্রায় প্রত্যহ-ই ‘যানজট’ সম্পর্কে পত্র-পত্রিকায় নানাবিধ লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যা তা-ই রয়ে যাচ্ছে বরং মনে হচ্ছে দিনকে দিন সমস্যাটি আরো প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।
;
কোন কোন মাধ্যম থেকে বলা হয়ে থাকে ঢাকার রাস্সতাত্মা নাকি ‘প্রশস্ত’ বা নয়। কথাটির মধ্যে ‘আংশিক সত্য’ থাকলেও পুরোপুরি সত্য কতটুকু তা বিবেচনার দাবী রাখে। জনবহুল ‘হংকং’য়ের রাস্তা ঢাকার চেয়ে প্রশস্ত এ কথা কেউ দাবী করতে পারবে না। হংকংও ঢাকার মত জনভারে ভারাক্রান্ত। ১-কোটি জনসংখ্যার শহর হংকংয়ে পর্যটক থাকে আরো ১ কোটি। কিন্তু সেখানে ‘যানজট’ এতো প্রকট নয় কেন? তাহলে ঢাকায় এ সমস্যা এত প্রকট কেন? যার জবাব কিছুটা এরূপঃ ঢাকার যে রাসত্মাগুলো আছে তার প্রায় অর্ধেক (৪ লেনের মধ্যে ২ লেন) দখল করে রেখেছে দোকান, গাড়ি বা রিক্সা-পার্কিং এবং পার্কিং ছাড়াও ১ম লেনে নানাবিধ জিনিসপত্র, ঠেলাগাড়ি, মেরামতি কারখানা, ভবঘুরে, দোকানের মালামাল ইত্যাদি রেখে। ফুটপাত দখল করেছে হকার ছাড়াও বর্র্ণিত জিনিসপত্র। তাই ঠেকায় পড়ে কিংবা অভ্যেস বসত অধিকাংশ মানুষ ফুটপাত ছেড়ে রাসত্মার প্রথম বা ২য় লেন দখল করে হাটছে। এ ছাড়া শহরে চলাচলকারী ‘সিটিং’ ও লোকাল বাসগুলো ‘স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক বিধায়’ (মনে হচ্ছে ড্রাইভারদের জন্যেই দেশটি স্বাধীন করা হয়েছে) ‘যত্রতত্র’ বিশেষ করে পুলিশের সামনেই মোড়ে মোড়ে দঁাড়িয়ে, এলোপাথারী রেখে যাত্রী তুলছে ও নামাচ্ছে, যেন দেশটি তাদের ‘পৈত্রিক’ সম্পত্তি। কখনো কোন কোন বাস সমশ্রেণির বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে ঠিক রাসত্মার মাঝে বা ২য় ট্রাকে দাড়িয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কয়েক মিনিটের মধ্যে সাধারণ গাড়ির দীর্ঘ লাইন লেগে যাচ্ছে। তা ছাড়া বিশেষ সুবিধা না থাকাতে কোন কোন যাত্রীবাহী বাস ‘হঠাৎ’ করে ‘ইউ-টার্ন’ নিচ্ছে (যেমন উত্তর বাড্ডা, প্রগতি স্বরণীতে)। দেখা যাচ্ছে একটা বাসের ইউ-টার্নের কারণে কমপক্ষে একশ’টি গাড়ির লাইন পড়েছে। নিন্দুকেরা বলেন ‘পুলিশ’ নাকি ফুটপাত ও পরিবহন কোম্পানীগুলো থেকে নিয়মিত মাসিক ‘মাসোহারা’ পান, তাই তারা নিজেরা এই সমস্যার ব্যাপারে কিছু বলতে পারছেন না কিংবা পুলিশের কথা সংশিøষ্ট ব্যক্তিবর্গ ‘কেয়ার’ করছে না পুলিশের মাথা কিনে রাখার কারণে। জানিনা কথার মধ্যে সত্য কতটুকু, ‘অসভ্য ও আইন ভঙ্গকারী বাস ড্রাইভার’ দমনে পুলিশের নিস্পৃহতা জনগণকে সন্দিহান করে!
:
কিন্তু এ সমস্যা কি সমাধানযোগ্য নয়? এ সমস্যার সমধান কল্পে নিম্নরূপ কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত হতে পারে, যা প্রথমত বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’। (১) অবিলম্বে চলাচলযোগ্য সকল রাস্তার সকল লেন ‘মুক্ত’ করতে হবে। এ জন্যে কেবলমাত্র ‘পার্কিং’ জোন ছাড়া কেউ কোন রাস্তায় কেবল যাত্রী নামানো-ওঠানো ছাড়া গাড়ি-বাস-রিক্সা থামিয়ে রাখতে পারবে না। যাত্রী নামানো বা ওঠানোর জন্যে ২/১ মিনিট গাড়ি থামাতে পারবে। যাত্রী ওঠানো-নামানোর পর সংশ্লিষ্ট গাড়ি নিজস্ব গ্যারেজ বা পারকিং এলাকায় পার্ক করার জন্যে চলে যাবে। ২/১ মিনিটের বেশী থেমে থাকা গাড়িকে ‘টানা গাড়ি’ দিয়ে টেনে নির্দিষ্ট স্থানে (যেমন প্যারেড স্কোয়ার) নিয়ে যাওয়া হবে, সেখান থেকে জরিমানা দিয়ে (যেমন দৈনিক ১০০০ টাকা) গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হবে। (২) সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ফুৃটপাতমুক্ত করতে হবে (প্রয়োজনে হকারদের নির্দিষ্ট এলাকায় বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেমন বড় রাসত্মাগুলোতে ছুটির দিনে বা প্যারেড স্কোয়ারে) পাবলিক যেন ফুটপাত ছাড়া রাসত্মা দিয়ে না হাটে, তার জন্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে (৩) ঢাকা শহরে চলাচলকারী সকল বাসগুলো কোন অবস্থাতেই নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করতে না পারে এবং এ জন্যে বাস সরকারের অনুকুলে বাস বাজেয়াপ্তের মত কঠোর আইন ও ড্রাইভারকে তাৎক্ষণিক জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে যাত্রীর জন্যে রাসত্মা দখল করে কোন বাস কোথাও ‘অপেক্ষা’ বা ডাকাডাকি করতে পারবে না, এ জন্যে আইনকে কঠোরতর করতে হবে। প্রয়োজনে আইনভঙ্গকারী বাস আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর অনুকুলে ‘বাজেয়াপ্ত’ ও ড্রাইভারকে ৩/৭-দিনের জেলসহ অর্থদন্ড ও লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিল করার আইন সংশোধন করা প্রয়োজন (৪) ইউ-টার্ন যথাসম্ভব কমাতে হবে। (৫) আর ঢাকার উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম মাথা পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও শুধু হেটে যাওয়ার জন্যে ‘হাটা উপযোগী ফুটপাত’ (রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্যে পøvস্টিক ছাউনীসহ) তৈরী করতে হবে এবং মিডিয়াগুলোতে ‘হেটে চলার’ উপকারিতার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার ও জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যাতে ঢাকার ৫০%-৭০% মানুষ কাংখিত গন্তব্যে হেটে চলার তাগিদ অনুভব করেন এবং অন্তত গন্তব্যের এক-দেড় ঘন্টা আগে রওয়ানা দেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। 
:
তা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্যে প্রবর্তন করতে হবে ‘স্কুল বাস’। আনুমানিক একটি বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০০ শিক্ষার্থীকে স্কুল গেট থেকে নিতে আসে কিংবা নামিয়ে দিয়ে যায় কিংবা ছুটির সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে এমন প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কেবল ঐ বিশেষ স্কুলের জন্যে গড়ে প্রায় ১০০-১৫০টি। ঢাকা শহরের একটি স্কুলের সামনের রাসত্মাটুকু পুরো বন্ধ করার জন্যে ঐ ১০০-১৫০টি গাড়িই যথেষ্ঠ। প্রাইভেট কারের বদলে যদি সংশিøষ্ট স্কুলগুলো শিক্ষার্থী পরিবহণে নিজস্ব স্কুল বাসের ব্যবস্থা করে, তাতে যানজট নিরসন ছাড়াও আরো নানাবিধ উপকার হয়। কারণ গড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী পরিবহনে ৫-টি দোতলা বাস বা ১০টি সাধারণ বাস লাগার কথা, যাতে স্থান দখল হবে ১৫০-টি প্রাইভেট কারের চেয়ে অনেক গুণ কম। রাসত্মায় চলতেও একই হিসেবে কম স্থান ব্যবহার করবে ঐ বাসগুলো। প্রশ্ন হলো, গাড়িগুলো ব্যক্তি মালিকানার কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ অত বাস পাবে কোথায়? হ্যা, এরও জবাব আছে। সরকার যদি কেবল শিক্ষার্থী পরিবহণের জন্যে প্রত্যেক স্কুলকে বিনা শুল্কে বাস আমদানী করতে দেয়, তবে বাসের দাম পড়বে অনেক কম। ঢাকা শহরের অনেক স্কুলেই বাস কেনার মত পর্যাপ্ত ফান্ড আছে বলে আমাদের জানা। যাদের নেই তারা ব্যাংক লোনে বাস কিনবে, আর লোন পরিশোধ করবে শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত বাসভাড়া ও ‘অন্যান্য আয়’ থেকে। আর এই ‘অন্যান্য আয়’ সম্পর্কে নিচে বিসত্মারিত আলোচনা করা হল।
:
সরকার বিআরটিসির মাধ্যমে বাস কিনে তা কিস্তিতে বা মাসিক ভাড়ায় দিতে পারে সংশিøষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিসিত্মতে বাসের দাম বা মাসিক ভাড়া পরিশোধ করবে। আয় বাড়ানো ও ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষের যাতায়াতে আধুনিকতা, প্রতিযোগিতা ও স্বাচ্ছন্দ আনার জন্যে স্কুল বাসগুলোকে শিক্ষার্থী পরিবহণের সময় ছাড়া অন্য সময়ে ‘সাধারণ যাত্রী’ পরিবহণের ‘বিশেষ অনুমতি’ দিলে একই ঢিলে ‘অনেক পাখি’ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা, যাতে ঢাকা শহরের বর্তমান ‘পরিবহন সন্ত্রাস’ কমবে এবং এভাবে স্কুলগুলো আয় থেকে ব্যয় নির্বাহের পর প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের বিনাভাড়ায় বা নামমাত্র ভাড়ায় আনা নেয়া করতে পারবে। বর্তমানে কোন কোন শিক্ষার্থী নিজস্ব গাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসে, কেউবা রিক্সা বা পায়ে হেটে একই স্কুলে আসা যাওয়ার কারণে, তাদের মধ্যে যে মানসিক ও শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে তাও নিরসন হবে বিধায় শিক্ষা হবে আসলেই আদর্শিক তথা কল্যাণকর। কারণ শিক্ষার একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে, শিক্ষার্থীর মানসিক ঐকতান। যে কারণে স্কুল ড্রেস একই মানের করা হয় গরিব ধনী নির্বিশেষে, যাতে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে প্রভেদ করতে না শেখে কিংবা ভালবাসা জন্ম নেয় একে অপরের প্রতি। কিন্তু কোন কোন শিক্ষার্থী প্রাইভেট কার, কেউ বাসে, আবার কেউ রিক্সায় আসার কারণে শিক্ষার্থীর মধ্যে ঐ চেতনাগত ভিন্নতাও সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের অজামেত্মই। বর্ণিত ধনী-গরিব নির্বিশেষে ‘একই স্কুল বাসে’ আগমন নির্গমনে শিক্ষার্থীর মধ্যে সমতা আর দেশপ্রেমও সৃষ্টি হবে, যা ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য অত্যাবশ্যক।
:
আর সর্বোপরী আইন করতে হবে কঠোরতর। সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের মত জনবহুল দেশেও ‘দোররা’ মারার মত কঠোর আইন বিদ্যমান থাকাতে দেশ দুটো সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। আমরা অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন, দুর্নীতিবাজ জাতি হয়েও ‘গণতন্ত্রের মত ‘রিল্যাক্স’ আইনে চলছি বিধায়, সংকট দিনকে দিন ঘনীভুত হচ্ছে, আপাতত ‘গণতন্ত্র’কে কিছুটা স্তিমিত রেখে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করে ‘দুষ্টচক্র’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, তারপর ‘জাতে উঠলে’ তখন প্রজাতন্ত্রের সকলের মানবাধিকার রক্ষাসহ গণতন্ত্রের কথা চিন্তা করতে হবে। আরো দেখতে হবে বর্তমান প্রচলিত ‘রিলাক্স’ গণতন্ত্র আমাদের জন্য কতটা কল্যাণকর!







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন