সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রসঙ্গ হিজড়া : বিভিন্ন ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ - ১ # ১০৯

প্রসঙ্গ হিজড়া : বিভিন্ন ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ 

[ ৩ পর্বের লেখাটির পর্ব # ২ ] ১ম পর্ব ইতোমধ্যেই পোস্টকৃত
:
ইসলাম ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ
:
ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াদের মুখান্নাতুন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরবিতে মুখান্নাতুন বলতে মেয়েদের মত আচরণকারী পুরুষদেরকে বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু শুধুমাত্র মেল টু ফিমেল ট্রান্সসেক্সুয়ালদের বোঝানো হয়, তাই আরবি মুখান্নাতুন হিব্র্যু সারিস বা ইংরেজী ইউনুখ এর সমার্থক শব্দ নয়। আল কোরআনের কোথাও মুখান্নাতুন সম্পর্কে কিছু বলা হয় নাই। কিন্তু হাদিসে মুখান্নাতুনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
:
ইসলামের নবী বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, একজন মুখান্নাতুন হচ্ছে সেই পুরুষ যার চলাফেরায়, চেহারায় এবং কথাবার্তায় নারী আচরণ বহন করে। তারা দুই প্রকারেরঃ প্রথম প্রকারের হচ্ছে তারাই যারা এই ধরণের আচরণ ইচ্ছাকৃতভাবে করেনা এবং তাদের এই ব্যবহারে কোন দোষ নেই, কোন অভিযোগ নেই, কোন লজ্জা নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কোন অবৈধ কাজ না করে এবং পতিতাবৃত্তিতে না জড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যক্তি হচ্ছে তারাই, যারা অনৈতিক উদ্দ্যেশ্যে মেয়েলি আচরণ করে এবং তারা পাপী ।
:
ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে ইরানে সব থেকে বেশী রুপান্তরকামি অপারেশন করা হয়। তারা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে যে কোন এক লিঙ্গে রুপান্তর হওয়ার সুযোগ দেয়। 

কোরানের বিভিন্ন আয়াতে ও হাদিসে বেহেস্তে যে সব জিনিস পাওয়া যাবে তা হলো নিম্নরূপ :

যৌন উন্মাদনা সৃষ্টিকারী , উন্নত ও খাড়া স্তন বিশিষ্ট কুমারী নারী; অঢেল পবিত্র মদ (সরাবান তহুরা); মদ পরিবেশনকারী বালকগণ ( গেলমান)। দেখা যাচ্ছে, উক্ত উপাদান সমূহের সবগুলোই একমাত্র পুরুষেরই কাজে লাগবে। সেটা আরও বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ বার বার বলেছে যে, সেই উন্নত ও খাড়া স্তনবিশিষ্ট কুমারী নারীদের সাথে বেহেস্তবাসী পুরুষদের বিয়ে দিয়ে দেবে। অর্থাৎ উক্ত উপাদানের কোনটাই নারী বা হিজড়াদের জন্য তৈরী করা হয়নি। কোরানের কোন আয়াতেই বলা হয়নি, হিজড়াদের জন্য আল্লাহ বেহেস্তে তৈরী করে রেখেছে। তাছাড়া বেহেস্তের বর্ণনায় আর কোন উপাদানও দেখা যায় না, যা নারী বা হিজড়াদের কোন ফুর্তির কাজে লাগে। তাই কোন কোন কৌতুহলী মানুষের প্রশ্ন- আল্লাহ কি শুধু মাত্র পুরুষদের জন্যই বেহেস্ত তৈরী করেছেন ? তাই যদি করে থাকে, তাহলে নারী ও হিজড়ারা কেন ইসলাম পালন করবে ?
:
হিন্দু ধর্মে হিজড়া প্রসঙ্গ
:
ভারতবর্ষের প্রাচীন ধর্ম হিন্দু ধর্ম। ভারতবর্ষে লিঙ্গ বৈষম্যের পাশাপাশি একদা বর্ণ বৈষম্য প্রবল ছিলো। হিন্দু ধর্ম চারটি বর্ণে বিভক্ত। ব্রাম্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরকে সাধারনত হিজড়া নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু অঞ্চলভেদে ভাষাভেদে হিজড়াকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এই অঞ্চলে হিজড়াদেরকে সামাজিক ভাবে অবমূল্যায়িত করা হয়। তারা সমাজ থেকে দূরে বাস করতে বাধ্য হয়। বাজারে ভিক্ষাবৃত্তি, পতিতাবৃত্তিই তাদের প্রধান পেশা। শিক্ষিতরা অবশ্য কেউ কেউ ভাল পেশা গ্রহণ করছে ইদানিং। হিন্দু দর্শনে তৃতীয় লিঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়। নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত এই শ্রেণিকে ‘“তৃতীয় প্রকৃতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে’”। প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে এই ধরণের মানুষকে আলাদা ভাবে পুরুষ বা নারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো না। তাদেরকে জন্মসূত্রে তৃতীয় প্রকৃতি হিসেবে গণ্য করা হতো। তাদের কাছে সাধারণ নারী পুরুষের মত ব্যবহার প্রত্যাশা করা হতো না। আরাবানী হিজড়ারা আরাবান দেবতার পূজা করে। অনেক মন্দিরে হিজড়াদের নাচের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন, হিজড়াদের আশির্বাদ করার এবং অভিশাপ দেয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে। তাই অনেকেই ভয়ে হিজড়াদের অর্থ সাহায্য করে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন