শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে ৩৭-বছরে কি পেলাম কি পেলাম না : ৬৫


বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে ৩৭-বছরে কি পেলাম কি পেলাম না
৭৫-এ যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করা হতো, তবে কেমন বাঙলাদেশ পেতাম আমরা, তার লাভ-ক্ষতি দেখানোর চেষ্টা করা হলো কি পয়েন্ট আকারে :
১। সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পেতাম আমরা। এখন দেশকে অসাম্প্রদায়িক বলা হলেও, সাম্প্রদায়িকতা দেশের সবত্র সহজেই দৃশ্যমান।
২। ড. কুতরতী খুদা শিক্ষা কমিশন মোতাবেক দেশে চলতো এক ধারার শিক্ষা। এখন সাধারণ স্কুল, এ-ও লেভেল, হাফেজী, আলীয়া, কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক নানাবিধ শিক্ষায় তৈরী হচ্ছে একই দেশে হরেক রকম মন মানসিকতার মানুষ।
৩। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কোন শক্তি থাকতো না, এখন একই দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ দুটো শক্তি বিদ্যমান সমশক্তিতে।
৪। জামাত ও ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ থাকতো, এখন জামাত ও নানাবিধ ধর্মভিত্তিক দল নানা অনুসঙ্গে বিদ্যমান রাজনীতিতে।
৫।রাষ্ট্রভাষা সমাজের সর্বত্র প্রচলিত হতো, বর্তমানে হাইকোর্টসহ অনেক স্থানেই বাংলা ২য় শ্রেণির ভাষার স্থান পেয়েছে।
৬। দেশ একদলীয় ও সাম্যবাদী চিন্তাধারায় চলতো বিধায় বাংলাদেশের অবস্থা হতো বর্তমানে চীনের মত রপ্তানীমুখী। এখন হয়েছে পুঁজিবাদী ধনিকশ্রেণির আমদানীমুখী বাংলাদেশ। বিদেশী মাল বিক্রির জন্য তৈরী হয়েছে অসংখ্য শপিং মল।
৭। হরতাল, ধর্মঘট, সন্ত্রাস, নাশকতা, হরেক রকম পত্র-পত্রিকা বন্ধ থাকতো, এখন বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান বলে হরতাল, ভাংচুর, হাজারো পত্র-পত্রিকায় বাজার সয়লাব।
৮। একদলীয় শাসনের দেশে ভেজাল, নাশকতা, অপহরণ, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির শাস্তি মৃত্যুদন্ড থাকে বিধায় এ অপরাধে মুক্ত থাকতো বাংলাদেশ, এখন সহজিয়া গণতন্ত্রের কারণে ভেজাল, নাশকতা, অপহরণ, ঘুষ, দুর্নীতির দুষণে দেশ দুষিত হয়েছে।
৯। প্রগতিশীল শিক্ষা ব্যবস্থা ও মননশীল চিন্তা লালনের কারণে সমাজে বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ-তরুণীর গ্রুপ সৃষ্টি হতো। এখন হেফাজত, শিবির, তাহরীর, জেএমবি ইত্যাদি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে।
১০। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কারণে ‘সকলে সবার জন্য’ শ্রেণির মননের মানুষ তৈরী হতো, এখন সর্বত্র ভোগবাদ এবং যে কোন ভাবে অর্থ কামানোর ধান্ধা রপ্তকারী মানুষ সৃষ্টি হয়েছে।
১১।দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠার সরকারি হতো, নামমাত্র বা বিনামূল্যে শিক্ষা পেত সকল নাগরিক, এখন নানাবিধ পাঁচমিশালী স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় দেশ ভরপুর।
১২। প্রত্যেক নাগরিক ন্যুনতম স্বাস্থ্য সুবিধা তথা ফ্রি চিকিৎসা পেত, এখন কেউ সিঙ্গাপুরে, কেউ এ্যাপোলো, কেউ ঢাকা মেডিকেলের ফ্লোরে, আবার কেউ অর্থাভাবে ডাক্তার-ঔষধ কিনতে পারছে না, তাবিজ-পানিপড়া নিচ্ছে।
১৩। নাগরিকের জন্য সুসম বাস্তু নীতি থাকার কারণে চীনের মত সবাই অন্তত ছোট বাসস্থানে বসবাস করতো, এখন কেউ বিলাসবহুল আলিশান বাড়িতে, আবার কেউ কাওরান বাজারে সারারাত কাজ করে নিজের টুকরী, ভ্যান বা ফুটপাতেই ঘুমানোর কাজ সারছে।
১৪। সুষ্ঠু জননীতির কারণে দেশে স্বল্প জনসংখ্যা থাকতো এবং চীনের মত সবাই নিজের দেশে কাজ করতো, এখন অপরিকল্পিত জনভারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ অবৈধ পথে বিদেশে যাচ্ছে, মারা পড়ছে কিংবা রাস্তাঘাটে ঝাড়ুদারের কাজ করছে।
১৫। সুশিক্ষার কারণে দেশ ধর্মীয় কুসংস্কার ও অনাচারমুক্ত জ্ঞানের চর্চা হতো, এখন ৪২-বছর আগের মতই বাংলাদেশ তুক-তাক, ওঝা-বৈদ্য, জিন-পরি, ওরস-মজমা, ফতোয়া-নাস্তিক-মুরতাদ চর্চা হচ্ছে।
১৬। ছাত্র রাজনীতি, শ্রমিক রাজনীতি বন্ধ থাকতো বিধায় সবাই যার যার কাজে মনোনিবেশ করতো। এখন ছাত্ররা, শ্রমিকরা, শিক্ষক, ডাক্তারসহ অন্য পেশাজীবীরা কি করছে তাদের ‘ফরজ’ কাজ ফেলে, তা কি কাউকে বলে দিতে হবে এ ২০১৪ সনে?
এ লিস্ট হয়তো বড় করতে চাইলে ১০০-পৃষ্ঠার করা যাবে কিন্তু থাক এ পর্যন্তই। শুধু অনুরোধ করবো বাঙালি জাতিকে এটা অন্তত বুঝুন যে, যারা হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুকে, তারা শুধু তাকেই হত্যা করেনি, একটা জাতিকে পিছিয়ে দিয়েছে অন্তত ৫০-১০০ বছর! যার খেসারত দিয়ে গেলাম এ প্রজন্মের মানুষেরা। একটি প্রাকৃতিক সুন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অসভ্য-সাম্প্রদায়িক দেশের তকমা লাগানো হলো একুশ শতকে।

https://www.facebook.com/logicalbengali/posts/1524804714420346:0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন