শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

তাইওয়ানের "সানঝি" গাঁয়ের "ক্যাথি-কং" এর কৃষি কাজ (পর্ব ১-৪) : ৭৯

তাইওয়ানের "সানঝি" গাঁয়ের "ক্যাথি-কং" এর কৃষি কাজ (পর্ব ৪)
উঁচু টিলার মত পাহাড়ে কিভাবে কৃষকরা চাষ করে তা দেখাতে প্রায় ১ কিমি দুরে নিয়ে গেল ক্যাথি আমাদের। ট্রাক্টরে চড়ে খামারের ভেতর দিয়ে ৩ জনে গেলাম দুরের টিলায় চাষ দেখতে। ক্যাথি দক্ষ ট্রাক্টর চালক তাও বুঝলাম আমরা। সে তাইপে শহর থেকে কৃষিতে ডিপ্লোমা করে কৃষি কাজ করতো আ্গে তার গাঁয়ে, এখন কৃষি পণ্য বিক্রি করে তাইপে শহরে। কৃষি পণ্যের দোাকানে কৃষি বিষয়ে পড়ালেখা করেনি এমন কেউ কাজ করতে পারেনা। তাই নিজের পেশায়ই কাজ করছে ক্যাথি বুঝলাম আমরা।পথে দেখলাম রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে গ্রিন হাউসের মত করে গাছের চারা করেছে তার ভেতর অন্য কৃষকরা। টিলা পাহাড়ে কত সুন্দর করে চাষ করেছে কৃষকরা তা দেখে মুগ্ধ হলাম আমরা, যেন ফসলের বাগান ফুলের বাগানের চেয়েও সুন্দর। ২-টার আগেই আমরা রওয়ানা দিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ক্যাথি বললো, সে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পরিচালিত খামার দেখাতে চেষ্টা করবে আমাদের। আমরা হেঁটেই চললাম ক্যাথির সাথে।


তাইওয়ানের "সানঝি" গাঁয়ের "ক্যাথি-কং" এর কৃষি কাজ (পর্ব ৩)
ক্যাথির মা নিজেদের গাছের লাল জামরুল খাওয়ালো আমাদের। ক্যাথির মা বাবা আর অন্য স্বজনরা ভাষাজনিত কারণে কথা বলতে পারেনি আমাদের সাথে কিন্তু তাদের আন্তরিকতা দেখে ইচ্ছে হলো এই গ্রামে থেকে যাই অনন্ত কাল। নিচু জমিতে ধান খেতে মাছের চাষ দেখালো ক্যাথির গাঁয়ের অন্য মানুষেরা। গ্রামের একটু দুরের ট্রেন স্টেশনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে কৃষিকাজ করে ৭/৮ দিন কৃষকদের সাথে এমন কথাও বললো ক্যাথি, যাওয়ার পথে ছাত্র-ছাত্রী পরিচালিত কৃষি খামার দেখাবে এমন প্রতিশ্রতি দিল সে আমাদের। আমরা দুপুরে ক্যাথিদের খামারে সবজি আর হাসের মাংস দিয়ে আঠালো ভাত খেলাম দুটো কাঠি দিয়ে। আমাদের খাওয়া দেখে ঐ গ্রামের সবাই হেসে লুটোপুটি, কারণ কাঠি দিয়ে ধরতে গেলে সবই পরে যায় আমাদের। ওখানের শিশুরাও নিখুতভাবে ধরতে পারে সব কিছু।


তাইওয়ানের "সানঝি" গাঁয়ের "ক্যাথি-কং" এর কৃষি কাজ (পর্ব ২)
স্বপ্নেও ভাবিনি এমন সুন্দর গ্রাম হবে এটা। ক্যাথি তেমন ইংরেজি জানেনা, সম্ভবত তাই সে এসব বলতে পারেনি আমাদের। গ্রাম দেখতে গিয়ে অনুপম সৈকত আর তার মাঝের ছোট ছোট ঘর দেখে ইচ্ছে হলো সাতরে গিয়ে ঐ ঘরে উঠি। গ্রামের রাস্তাও চমৎকার করে বানানোা, পাকা রাস্তার দুদিকে নানাবিধ ফসল আর ফলের বাগান, কলার বাগানও দেখলাম বাংলাদেশের মতো। সাদা রংয়ের করলা দেখে বিস্মিত আমরা তিন জনেই। অনেক মানুষের সাথে পরিচয় করালো ক্যাথি গ্রাম আর ফসলের মাঠে।

তাইওয়ানের "সানঝি" গাঁয়ের "ক্যাথি-কং" এর কৃষি কাজ
তাইপে শহরের ফলের দোকানি "ক্যাথি কং" নামের এক তরুণি। আমার সহযাত্রি বন্ধু চীনা খাবার তেমন খেতে পারেনা, তাই তার জন্যে প্রায় ফ্রুট কিনতে যাই পাশের ফলের দোকানে। বিক্রেতা মেয়েটি সব ফলের দাম লিখে রেখেছে মোটা কাগজে। ২/৩ দিনেই আমাদের বাদামি মানুষদের সাথে তার বেশ পরিচয় জমে ওঠে। এক সময় বলে অনেক দূরের সানঝি গ্রামে তার বাড়ি। তা সাগর পারে। সাগর দেখা আমার অনেক পুরণো সখ। আমাদের বিশেষ করে আমার অনুরোধে ক্যাথি রাজি হয় পরদিন আমাদেরকে বুলেট ট্রেনে তার সানঝি গ্রামে নিয়ে যেতে। সকাল ৭টায় আমরা ৩ বন্ধু ক্যাথির সাথে ম্যাগনেটিক ট্রেনে রওয়ানা দিলাম ২১৩ কিমি দুরের সানঝি গ্রামে।
ছবি :
১। সানঝি গায়ের ক্যাথিকং
২। পর্যটকদের জন্য সমুদ্রতীরে বানানো রিসোর্ট, এটার জন্য গ্রামটি বিখ্যাত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন