সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জামায়াত কখনো ক্ষমতায় এলে দেশ যেভাবে চলবে # ১৪৩

জামায়াত কখনো ক্ষমতায় এলে দেশ যেভাবে চলবে 
জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি শুরু করছে সেই ১৯৩৮ থেকেই বৃটিশ ভারতে। পাকিস্তান আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিল তারা। ক্ষমতায় আসার জন্যে এহেন পন্থা নেই, যা তারা গ্রহণ করেনি। যদিও হাদিসে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে-‘‘নেতৃত্বের প্রার্থনা করো না’’ (বুখারী-৬২৫৫)। তারপরও জামায়াত একাত্তরে ক্ষমতার জন্যে স্বজাতির সঙ্গে কি কি করেছিল তার সাক্ষী বাংলাদেশের ১৫-কোটি মুসলমান। ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে তারা কোরান হাদিসকে পরিত্যাগ করে মহিলা নেতৃত্ব মানতেও পিছপা হয়নি, যদিও মহিলা নেতৃত্ব সম্পর্ক হাদিস হচ্ছে-‘‘সে জাতি কখনো সফলকাম হতে পারেনা যে তার রাষ্ট্রীয় কাজকারবার সোপর্দ করে একজন মহিলার উপর’’ (বুখারী-৪০৭৭)। সম্প্রতি তারা রাজপথে হঠাৎ করে পুলিশদের উপর আক্রমন করে কিভাবে তাদের রক্তাক্ত করেছে, তাও কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি। তাদের আক্রমনকারী সব পুলিশই ছিল মুসলমান, যদিও মুসলমানকে আক্রমন ও হত্যা সম্পর্কে হাদিস হচ্ছে, ‘‘একজন মুসলমান খুন হওয়ার চেয়ে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া আল্লাহর কাছে অধিকতর সহজ’’ (তিরমিযী-১৩৩৪)। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করে নিজস্ব এক চিন্তন জগৎ সৃষ্টি করেছে। যদি কখনো জামায়াত সত্যিই বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে, তবে তারা তাদের প্রতিশ্রতি তথা কোরান-হাদিস মোতাবেক দেশ পরিচালনা করবে। ধরা যাক, ২০১৪ সনে তারা ক্ষমতায় এলো বাংলাদেশের, তাহলে কিভাবে পরিচালিত হবে তাদের হাতে গণতান্ত্রিক সেক্যুলার বাংলাদেশ? উদাহরণ তুলে ধরা হলো জামায়াতের রাষ্ট্র পরিচালনা তথা কোরান-হাদিসের ভিত্তিতে :

বাংলাদেশের প্রায় সকল মহিলা এখন সোনার অলংকার পরিধান করে, জামাত ক্ষমতায় এলে কি হবে তখন যখন বলা হবে-‘‘যে স্ত্রীলোক সোনার হার, সোনার কানপাশা ব্যবহার করে, কিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের হার ও কানপাশা পরিধান করানো হবে (দাউদ-৪১৯০)। কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের মূল ভিত্তি এবং এদেশের ৮০% মানুষ নানাভাবে কৃষির সাথে জড়িত কিন্তু জামায়াত ক্ষমতায় এলে কৃষিকে পৃষ্টপোষকতা করা যাবে কি? কারণ- এক কৃষকের ঘরে কৃষিকাজের লাঙ্গল-জোয়াল দেখে নবী (স.) বলেছিলেন, ‘‘এটা (কৃষি যন্ত্রপাতি) যে জাতির ঘরে প্রবেশ করে আল্লাহ সেখানে হীনতা ও নীচতা ঢুকিয়ে দেন’’ (বুখারী-২১৫৩); ‘‘জিহাদ পরিত্যাগ করে কৃষিকাজে নিমগ্ন থাকলে আল্লাহ তাকে অপমান করবেন’’ (দাউদ-৩৪২৬)। ডাক্তারদের কি হবে যখন বলা হবে- ‘‘শিঙ্গা লাগানো সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসা’’ (দাউদ-২০৯৮)। হাউজিং কোম্পানীর জন্যেও দেয়া আছে নির্দেশনা -‘‘দালান-কোঠা নির্মাণের ব্যয়ে কোন কল্যাণ নেই’’ (তিরমিযী-২৪২৩)। বাড়িঘর ক্রয়-বিক্রয়ে যারা বায়না করেন তাদের জন্যে নির্দেশনা হবে- ‘‘নবী (স.) ক্রয়বিক্রয়ে বায়না নিষেধ করেছেন’’ (দাউদ-৩৪৬৬)। গ্রামে বসবাসকারীগণ সম্পর্কে জামায়াতী শাসনের নির্দেশনা হবে- ‘‘যে ব্যক্তি গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে সে হয় কঠোর প্রকৃতির’’ (তিরমিযী-২১০১); ‘‘শহরবাসীর উপর গ্রামবাসীর স্বাক্ষী জায়িয নয়’’ (দাউদ-৩৫৬৩); ‘‘নবী (স.) গ্রামের লোকদের জিনিসপত্র শহুরে লোকদের [দালাল-ফড়িয়ার মাধ্যমে] বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’’ (তিরমিযী-১১৬০-১); নবী (স.) মুসলমানদের বলেছেন, ‘‘যে গ্রামে গিয়ে তোমরা থাকবে ও যেখানে যাবে, তার অংশ তোমাদের হয়ে যাবে’’ (দাউদ-৩০২৬)। যারা অতিথি পছন্দ করেন না তাদের সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে- ‘‘মেহমানের হক আদায় না করলে বলপ্রয়োগ করে তা আদায় করো’’ (তিরমিযী-১৫৩৬); ‘‘বাড়ির মালিক বিশেষ কাউকে মেহমানদারী না করলে শক্তি প্রয়োগ করে মেহমানদারী আদায় করা যায়’’ (বুখারী-৫৬৯৮)। ক্রিকেটপ্রেমীসহ আধুনিক লেখাধুলা পছন্দকারীদের জন্যে জামায়াতী নির্দেশনা হবে- ‘‘তীর নিক্ষেপ, উট ও ঘোড়ার দৌঁড় ছাড়া আর কোন প্রতিযোগিতা নেই’’ (তিরমিযী-১৬৪৫) কিংবা ‘‘৩টি বাদে মুসলমানের সমস্ত ক্রীড়া-কৌতুক অযথা তা হলো-তীরনিক্ষেপ, ঘোড়ার প্রশিক্ষণ ও স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক’’ (তিরমিযী-১৫৮৪)।  

ট্যানারী ও বয়নশিল্প উদ্যোক্তাদের জন্যে জামাতী শাসনের নির্দেশনা হবে- ‘‘জানোয়ারের চামড়া ও তন্তু কোন কাজে ব্যবহার নিষেধ’’ (তিরমিযী-১৬৭৪)। নিলাম ও দরকষাকষি বিষয়ক জামাতী শাসনে কি হবে তখন যখন বলা হবে- ‘‘এক ক্রেতার উপর অন্য ক্রেতার দরাদরি করা হারাম’’ (বুখারী-৬৪৭৯)। জামায়াত যদি নির্দেশনা দেয় যে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যখন কেউ কিছু খায়, তখন তা মোছার আগে সে যেন তার হাত চাটে কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে চাটায়’’ (বুখারী-৫০৫২), তখন হোটেলগুলোতে মানুষ শুধু হাতই চাটতে থাকবে একে অপরের? ঋণখেলাপীদের ঋণ কি জামাত শাসনে মাফ হয়ে যাবে? যখন ঋণ খেলাপী বলবে- ‘‘নবী (স.) বলেছিলেন, মুমিনদের মধ্যে কেউ ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করলে তা পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার, আর যে সম্পদ রেখে যায় তা তার উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য’’ (বুখারী-৪৯৭১)। কবিদের অবস্থা হবে খুবই খারাপ যখন তারা জামাতী শাসকদের থেকে নির্দেশনা পাবে যে, ‘‘কারো পেট কবিতা দিয়ে পূর্ণ করার চেয়ে পূঁজ দ্বারা পূর্ণ করা অধিক শ্রেয়’’ (বুখারী-৫৭১৪); একজন কবি কবিতা পাঠ করতে করতে নবীর কাছে আসলে নবী (স.) বললেন, শয়তানটাকে ধরে আনো, কারো পেট পুঁজ দিয়ে ভরাও উত্তম, কবিতার চেয়ে (মুসলিম-৫৭০০)। ভাষাতত্ত্ববিদদের অবশ্যই জামাতী শাসনে কোনঠাসা হয়ে থাকতে হবে কারণ ‘‘ভাষাবিদের অতিকথনকে নবী (স.) ‘গরুর জাবর কাটা’ ও ‘আল্লাহ তাকে ঘৃণা করেন’ বলেছেন’’ (তিরমিযী-২৮৫৩)। 

জাদুকরদের কি জাদু দেখানো চলবে বাংলাদেশে? কারণ- ‘‘যাদুকরের শাসিত্ম তরবারীর আঘাত [হত্যা]’’ (তিরমিযী-১৪০০)। তবে যারা স্ত্রীকে মারধর করেন নিয়মিত তাদের জন্যে সুখবর থাকবে জামাতী শাসনে কারণ- ‘‘কোন ব্যক্তিকে [কিয়ামতে] তার স্ত্রীকে মারধর করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে না’’ (দাউদ-২১৪৪)। যে সকল জামাতী প্রকাশনী  হাদিসের বই ছেপে বিক্রি করছে এখন, তাদের কি হবে তখন যখন বলা হবে- ‘‘লেখা হাদিস নবী (স.) মুছে দেন ও হাদিস লিখতে নিষেধ করেন’’ (দাউদ-৩৬০৮)। দেবরপ্রিয় বাঙালি সমাজের মারাত্মক দুসংবাদ হবে জামাতী শাসনামলের দেবর-ভাবী সম্পর্কের ক্ষেত্রে- ‘‘পুরুষদের মধ্যে দেবররা হচ্ছে ভাবীদের কাছে মৃত্যুতূল্য’’ (বুখারী-৪৮৪৯)। প্রতিবেশী গৃহনির্মাণে বর্তমান প্রচলিত ৩-৫ ফুট যায়গা না ছেড়ে প্রতিবেশীর দেয়ালে পিলার স্থাপন করতে চাইলেও জামাত অনুমতি দেবে তখন কারণ- ‘‘প্রতিবেশী ঘরের দেয়ালের সাথে পিলার স্থাপন করতে চাইলে তাকে অনুমতি দাও’’ (তিরমিযী-১২৯০)। হিল্লা বিয়ে ছাড়া কেউ ফিরতে পারবে না পূর্ব স্বামীর ঘরে জামাতী শাসনে কারণ- ‘‘২য় স্বামীর সঙ্গে যৌনক্রিয়া ছাড়া কোন স্ত্রী তার পূর্বস্বামীর ঘরে ফিরে যেতে পারবে না’’ (বুখারী-৪৮৭৪-৫)। নারীদের বাইরে বের হওয়া ও মেকআপের ব্যাপারে জামাতী শাসনে কি আইন হতে পারে দেখুন- ‘‘স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সামনে সাজসজ্জা করে যে নারী যাবে, কিয়ামতের দিন সে অন্ধকারের মধ্যে থাকবে’’ (তিরমিযী-১১০৫); ‘‘নারী আবরণীয় বস্ত্ত, বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়’’ (তিরমিযী-১১১১)। মিনারেল ওয়াটার কোম্পানীর ব্যবসা বন্ধ হবে জামাতী শাসনে কারণ- ‘‘নবী (স.) পানি বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন’’ (তিরমিযী-১২০৮)। গানের শিল্পীদের জন্যে দুঃসংবাদ হবে জামাতী দেশ শাসনের সময় কারণ- ‘‘যে ব্যক্তি উচ্চঃস্বরে গান গায়, আল্লাহ তার জন্য ২-জন শয়তান প্রেরণ করেন তাকে পা দ্বারা দলিত করার জন্য’’ (তিবরানী); ‘‘গানের প্রশিক্ষণ দিওনা’’ (তিরমিযী-১২১৯); নবী (স.) বলেন, ‘‘আমাকে আল্লাহ আদেশ করেছেন সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশির উচ্ছেদ করতে’’ (মেশকাত); ‘‘পানি যেরূপ শস্য উৎপাদন করে, গান সেরূপ কপটতা জন্মায়’’ (বায়হাকী)। 

ধর্মান্তরিত ব্যক্তির রেহাই হবে না বাংলাদেশে জামাতী শাসনামলে কারণ- ‘‘যে ব্যক্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর’’ (তিরমিযী-১৩৯৮)। এ ক্ষেত্রে গরিব তথা মিসকিনের ছেলে কোন অপরাধ করলে ক্ষতিপুরণ ছাড়াও মুক্তি পাবে সে কারণ- ‘‘মিসকিনের ছেলে ধনীর ছেলের কান কাটলে তার কোন ক্ষতিপুরণ নেই [সম্পদ না থাকার কারণে]’’ (দাউদ-৪৫২৩)। কারো মৃত্যু হলে তার মাইকিং কি জামাত বন্ধ করে দেবে? কারণ- ‘‘মৃত্যু খবর ফলাও করে প্রচার জাহেলী যুগের কাজ, এ জন্যে তা থেকে বিরত থাকো’’ (তিরমিযী-৯২৫)। চিত্রকরদের কি অবস্থা হবে তখন জামাতী আমলে যখন বলা হবে- ‘‘ছবি দেখলেই তা নষ্ট করে দেবে ও উচ্চ কবর দেখলেই তা সমতল করে দেবে’’ (মুসলিম); ‘‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি আযাব ভোগকারী হবে ছবি নির্মাতাগণ’’ (বুখারী-৫৫১৮)। অন্যের বাগানে ঢুকে ফল খেলে কিংবা কারো গরু-ছাগল দোহন করলে জামাতী শাসনামলে তেমন অসুবিধা হবেনা কারণ- ‘‘বাগানে প্রবেশ করে ফল খাওয়া যাবে কিন্তু পুটুলী বেঁধে নেয়া যাবেনা’’ (তিরমিযী-১২২৪); ‘‘৩-বার মালিককে ডেকেও না পাওয়া গেলে তার অনুপুস্থিতে পশুর দুধ দোহন করে খাওয়া যাবে কিন্তু সাথে নেয়া যাবেনা’’ (তিরমিযী-১২৩৩)।

এ দেশের মানুষগুলো শান্তিপ্রিয় ও ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মকে তারা মানতে ও পালন করতে চায় ব্যক্তিজীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনের পরিবর্তে, যেভাবে এখন চলছে বাংলাদেশ। কিন্তু জামায়াত তা পালন করতে চায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং এটিই তাদের প্রতিশ্রুতি। সত্যিই যদি জামায়ত কখনো ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশে, তাহলে কি হতে পারে তাদের শাসনকালে তার উদাহরণ দেয়া হলো উপর্যুক্ত প্যারায় ক্ষুদ্র পরিসরে সুষ্পষ্টভাবে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রিয় গণতান্ত্রিক নাগরিকরাই এখন বিচার করে দেখুক জামাতী শাসনে প্রকৃতপক্ষে তারা বসবাস করতে পারবে কিনা শান্তিতে? মনে হয় পারবে না, যদিও বাংলাদেশের সকল মানুষ ধর্মপ্রাণ ও ধর্মকে ভালবাসে প্রচণ্ড রূপে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন