শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

১৫ আগস্টের দুখগাঁখার কাব্য # ৩ : প্রবন্ধ # ৪৯

আজকের জামাত-শিবির-হেফাজত উত্থানে বঙ্গবন্ধু কতটুকু দায়ী?
:
বাংলাদেশ জাতিগতভাবে এখন এক বিভক্ত রাষ্ট্র, যার একপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ, অপরপক্ষে জামাত-হেফাজত তথা ধর্মনির্ভর আধ্মাত্যবাদী গ্রুপ। বিাভন্ন সময়ে নানাবিধ শক্তি পরীক্ষায় দেখা গেছে ২-গ্রুপই দেশে বেশ শক্তিশালী। এখন বাংলাদেশি মানুষের বেশ বড় একটি অংশ চরম ভারতবিদ্বেষী (পাকিস্তানপন্থী) এবং হেফাজত-জামাতী চিন্তাচেতনার ধারক ও বাহক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী আধুনিক কোন মানুষ নিজ চেতনার জন্য রেললাইন উপড়ানো, আত্মাহুতি, মানুষ হত্যা, ধর্মীয় কিতাব ও উপাসনালয় পোড়ানোর মত কাজ করতে না চাইলেও, বিশেষ যজবাধারী বর্ণিত হেফাজত-শিবির ক্যাডাররা কিন্তু খুব সহজেই বর্ণিত কাজকে করতে পারে নিজের ‘ফরজ’ কাজ হিসেবে। কিন্তু হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতির মধ্যে এদের উদ্ভব ও বিকাশের জন্য কে বা কারা দায়ী? নৃতাত্ত্বিকভাবে বাঙালি কিন্তু পাকিস্তানী, পাঠান বা সেমেটিক নন যে, তারা কথায় কথায় মানুষের রক্ত প্রবাহিত করবে। এ দায়দায়িত্ব নিরূপণে ‘‘বিএনপি-জাতীয় পার্টির ভূমিকা’’ নিয়ে আরেকটি পোস্ট দেব, আজ কেবল বঙ্গবন্ধুর দায় নিয়ে কথা বলতে চাই।
:
৭২-সালে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্ব ছিল বিশ্বজনীন ও আকাশচুম্বী। তিনি সহজেই এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ৩৭,০০০ বাংলাদেশ বিরোধী রাজাকার তথা যুদ্ধোপরাধীকে ‘নিধন’ করে দিয়ে দেশকে ক্লিন রাখতে পারতেন (মাও সেতুং এর মত, মাও ৮৪,০০০ চীনা রাজাকার বা কুনমিংতাংকে নিধন করেছিল একদিনেই রেড স্কোয়ারে, বাকিরা পালিয়ে যায় ফরমোজা বা তাইওয়ানে)। তাহলে আজ বিচার নিয়ে এতো রাজনীতি ও দেশকে জিম্মি করার প্রশ্নই উঠতো না। একই ভাবে তিনি দেশে স্কুল-মাদ্রাসা কেন্দ্রিক নানাবিধ ‘জগাখিচুড়ী’ শিক্ষার বদলে চালু করতে পারতেন একই মানের ‘সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা’ (খোদ সৌদি আরবে আলাদা কোন মাদ্রাসা শিক্ষা নেই, আরবিতে স্কুলকে ‘মাদ্রাসা’, কলেজকে ‘কুলিয়া’ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জামে’য়া’ বলা হয়), যাতে সকল বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক হতো এবং ‘বাধ্যতামূলক ধর্মশিক্ষা’য় একই পুস্তকে সকল ধর্মের ভাল ভাল কথাগুলো থাকতো। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানরা একই ধর্মপুস্তক পড়ে জানতে পারতো ইসলাম, সনাতন, বৌদ্ধিক ও খৃস্টানিটি সম্পর্কে। সম্ভবত ধর্মীয় কারণে কেউ কাউকে এতো ঘৃণা করতো না। 
:
এখন একই ঘরে বসবাসরকারী একই মায়ের পেটের সন্তানেরা শুধু নানাবিধ শিক্ষার কারণে একই ভাই-বোনকে একে অপরে ‘নাস্তিক-মুরতাদ’ বা ‘কাঠ-মোল্লা’ বলতো না। দেশ এগিয়ে যেত সামনে। বর্ণিত কাজটি করলে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ঐ সময় টু-শব্দটি হতোনা সঙ্গত কারণেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভুত-ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে নিজের ‘মহানুভবতা ও উদারতায়’ ৩৭,০০০ রাজাকার প্লাস মাদ্রাসা শিক্ষা (বিশেষ করে কওমী) দেশে বহাল রেখে নিজে পরপারে চলে গিয়ে ‘বেঁচে গেলেও’, আমাদের ফেলে গেছেন ঐ ৩৭,০০০-এর বিশাল বংশধারা (রাক্ষসের বংশ নাকি দ্রুত বাড়ে) ও তাদের আরো বিশাল কওমী চেতনাধারী ‘মতিঝিলি হেফাজতী’ গ্রুপের মধ্যে। এখন একই জাতির মধ্যে আমরা হানাহানি শুরু করেছি একে অপরকে নিধনের জন্য। সুতরাং আজকের এ পরিস্থিতির জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বঙ্গবন্ধুকে কেন জানি দায়ী মনে হয় আমার! আপনি কি বলেন মুক্তিযু্দ্ধের চেতনাধারী বন্ধুরা? 
:
বিষয়টির সঙ্গে একমত হলে লাইক দিন। আর দ্বিমত পোষণ করলে যৌক্তিক মন্তব্য করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন