শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

এদেশের নদীগুলো শুকানোর জন্যে কি সত্যিই ‘ফারাক্কা’ দায়ী? # ৮৪

এদেশের নদীগুলো শুকানোর জন্যে কি সত্যিই ‘ফারাক্কা’ দায়ী?

পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে সরকারী-বেসরকারী নানা পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারের কারণে বিশ্বাস জন্মে যে যে, ‘‘শুকেনো মৌসুমে (শীতে) ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহারের কারণে এদেশের নদীগুলো শুকিয়ে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে, বিপরীত দিকে বর্ষা মৌসুমে ভারত ‘তার পানি’ বাংলাদেশের দিকে ‘ঠেলে’ দিয়ে ভাটির এ দেশটিকে ডুবিয়ে মারছে’’। এ দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বেশেষে কোটি কোটি মানুষ উপরে বর্ণিত কথাগুলো বিশ্বাস করার কারণে, তাদের বর্তমানে দুর্ভোগের জন্যে ‘ভারত’কে দায়ী করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। নদীসৃষ্ট আমাদের বর্ণিত দুর্ভোগ্যের জন্যে প্রকৃতপক্ষে ‘ফারাক্কা’ তথা ‘ভারত’ সত্যি কি দায়ী? না কেবলমাত্র প্রতিবেশী একটি বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা টিকিয়ে রাখার এটি একটি ষড়যন্ত্র? বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করা যেতে পারে।

নদীর ধর্মানুযায়ী নদী তার প্রবাহিত গতিপথে সকল প্রকার বাঁধা ও অসমতা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায় এবং পর্যায়ক্রমে গতিবেগ হ্রাস পাওয়ায় আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে প্রবাহিত হয়। সৃষ্ট সর্পিল বাঁকের কারণে ক্ষয়ক্রিয়া তথা ভাঙনের সৃষ্টি হয়। প্রথাগতভাবে নদীগুলোর জীবনকাল ‘যৌবন’, ‘পরিণত’ এবং ‘বার্ধক্য’ এই তিন পর্যায়ে বিভক্ত। উৎসে নদীগুলো ‘যৌবন’দীপ্ত তথা খরস্রোতা থাকলেও, বাংলাদেশে নদীগুলো মূলত তারুণ্য-যৌবন হারিয়ে ‘পরিণত’ বয়সে মন্থর ও বিসর্পিল বা বিনুনি আকতি নিয়ে এদেশে প্রবেশ করে এবং অনেক নদী কেবল ‘বার্ধক্যে’ এদেশে প্রবেশ করে বিধায় নাব্যতা হারায়।

যে কারণে বিগত ১০০ বছরে আমাদের প্রায় ২৪,১৪০ কিমি নদীপথের আঁকাবাঁকা সর্পিল চমৎকার নামধারী ৭০০ জালিকার মত নদীপ্রবাহের অনেক নদী এখন মৃত কিংবা মৃতপ্রায়। অস্তিত্বলোপ বা বিলুপ্তপ্রায় এ নদীগুলো হচ্ছেঃ ডাহুক, তলমা, নাগর, কোকিল, টাংগস, ঘাঘট, ঢেপা, আত্রাই, বুড়িতিসত্মা, যমুনেশ্বরী, ত্রিমোহনী, ধরলা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, জিজিরাম, করতোয়া, ছোট যমুনা, শিব, মহানন্দা, পাগলা, বারানাই, ভোগাই, নিতাই, কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, পিয়াইন, বানার, কুমার, মধুমতি, নবগঙ্গা, ফটকি, চিত্রা, ভৈরব, কপোতাক্ষ, গোমতী, স্বাতি, খারভাজা, আখির, খারখরিয়া, গদাধর, সনকোশ, নোয়াডিহিং, কাপিলি, টাঙ্গন, কোরাম, বড়াল, জলঢাকা, কল্যাণী, হুরাসাগর, তালান, লক্ষ্যা, ভুৃবনেশ্বরী, ইলশামারী, আইমন, সুতিয়া, বোথাই, নিতারী, পানকুরা, ধানু, মানস, কালনি, হরি, রক্তি, তিতাস, খেরু, কাকড়ি, জাঙ্গালিয়া, বুড়িগাঙ, বিজলী, ইছামতি, জলাঙ্গি, চন্দনা, পানগুবি, কবা, পাংগানি, গড়াই, পাংল, আত্রাই, গলাঙ্গী, শীলা, কাগীবাগ, চন্দনা, পটুয়া, ধানসিঁড়ি, নলবিটি, কালিদা, বুড়া গৌরাঙ্গ, হংসরাগ, ডাংমারি, লতাবেড়ি, সাতনলা ইত্যাদি। উপর্যুক্ত নদীগুলোর বিলুপ্তি কিংবা গথিপথ বার্ধক্যে পরিণত হওয়াকে কি ‘ভারতের কারসাজি’ বলবো? এভাবে আমরা গত ১০০ বছরে হারিয়ে ফেলেছি ১০০-এর বেশি নদী। হারিয়ে যাওয়া এই নদীগুলোর জন্যে কিন্তু ফারাক্কাকে দায়ী করার কোন উপায় নেই। এর ২/৪ টার সাথে যোগসূত্র থাকলেও অধিকাংশ নদীর সঙ্গে ফারাক্কার কোন যোগসূত্র ছিলনা কিংবা এখনো নেই।
তো কি বলেন ভারত বিদ্বেষী বাংলাদেশি বন্ধুরা?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন