সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাঙালিঃ বিশ্বের গরিবতর জাতি কিন্তু ভয়াবহ অপচয়কারী # ১৩৮

বাঙালিঃ বিশ্বের গরিবতর জাতি কিন্তু ভয়াবহ অপচয়কারী 
মাত্র ,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার তথা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইলের ১৬-কোটিরও বেশী লোকে-লোকারণ্যের একটিলোকালয় : নাম বাংলাদেশ! দেশটির ইসলাম ৮৯.%, আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা .%, যার সঙ্গে অভাব-অনটন একই সূত্রে গাঁথা সেই চর্যাপদে প্রাচীন কাল থেকেই। সেখানেও নানাবিধ অভাব আর কষ্টের কথা বর্ণিতহয়েছে চর্যার পাতায় পাতায়! উপর্যুক্ত দুটো ধর্মেই অপচয়কে না বলতে সেখালেও আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক,ধর্মীয়  ব্যক্তিপর্যায়ে মারাত্মক অপচয় আমরা প্রত্যক্ষ করি প্রত্যহ। যে কারণে  দেশে কিছু মানুষ ভোগ বিলাসেজীবন যাপন করলেও, কোটি কোটি মানুষ তাদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত জন্মের পর থেকেই!আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করি না জেনেই কিন্তু  ভবনটিতে প্রকৃত ব্যবহার্য স্পেসেরতুলনায় এতে কত বেশি লিফট, সিঁড়ি  লবি বানিয়ে যায়গা নষ্ট করা হয়েছে, তা কি আমরা চিন্তা করেছি? ভবনটি বানাতে যে যায়গা নিয়েছে লুই-ক্যান, তাতে ঢাকা শহরের সকল সরকারি অফিস-আদালত নির্মাণ করাযেত। জমির স্বল্পতা এদেশে সবচেয়ে বেশী প্রকট। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছেবাংলাদেশে ভূমিকেন্দ্রিক মোকদ্দার সংখ্যা মোট মামলার ৮৩% মূলত ভূমির স্বল্পতাহেতু জমি নিয়ে এতো ঝগড়া-বিবাদ মামলা-মোকদ্দমা! এই জমি সংকটের এদেশে হাজার হাজার একর জমি কিভাবে আমরা অপচয় করছি, তারদুয়েকটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো।
মারাত্মক ঘনবসতির ঢাকা শহরে স্টেডিয়াম কমপক্ষে ৫টি (বঙ্গবন্ধু, মীরপুর, সায়েদাবাদ, ফতুল্লা ও আর্মি)। প্যারেড স্কোয়ার, মাঠসহ কতো জমি নষ্ট করছি ভিন্ন ভিন্ন অযুহাত ও কাজে তার হিসেবে কে করবে? শিল্পকলা একাডেমি, মহিলা সমিতি, গার্ল গাইড, ওসমানী, মহানগরী নাট্যমঞ্চ, টিএসসি, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রসহ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করে রাখা হয়েছে নানা আকার আয়তনের মঞ্চ/অডিটরিয়াম। অথচ কেন্দ্রীয়ভাবে ২-৩টি অডিটরিয়াম/মঞ্চ দিয়েই অভাবী দেশের পর্যায়ক্রমিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তেজগঁা কিন্তু তার বাসভবন আসাদগেট, আবার রাষ্ট্রপতির দপ্তর গুলিস্তান। সরকারী পর্যায়ে সারা দেশের কথা বাদই দিলাম, কেবল ঢাকা শহরেই নানা আকৃতি-প্রকৃতি আর আয়তনের ছোট বড় সরকারী অফিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শহরের সর্বত্র। কোনটি পুরণো ঢাকায়, আবার কোনটি মতিঝিল, কোনটি আগারগঁায়ে, আবার কোনটি উত্তরায়। কোনটি একতলা, আবার অন্যটি বহুতল বিশিষ্ট। হিসেব করলে দেখা যাবে, সরকারী বর্ণিত অফিসগুলোর জন্যে যে জমি নষ্ট হচ্ছে, তা ঢাকা শহরের যে কোন স্থানে বহুতল বিশিষ্ট একটি বিশাল ভবন নির্মাণ করলে তাতেই স্থান সংকুলান সম্ভব। অথচ শহরের নানা স্থানে বিক্ষিপ্ত ও নানাভাবে অফিস ধরে রেখে সময়, অর্থ ও জমির অপচয় করা হচ্ছে যুগের পর যুগ। বিদ্যুৎ স্বল্পতা সত্বেও আমরা কিভাবে তা অপচয় করছি তা সরকারী অফিসগুলো পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে, সেখানে কর্মকর্তা কর্মচারী না থাকলেও, অনেকসময় খালি রুমে ঘুরতে থাকে ফ্যান বা চলতে থাকে এসি। 

সরকারী অফিস বাদ দিলেও ‘সুপার মল’ বা ‘পেট্রোল পাম্প’গুলোতে উৎসবের মত লাইটিং দেখে বোঝার উপায় নেই, বিদ্যুতের কারণে অনেক কৃষক তাদের জমিতে ঠিকমত সেচ দিতে পারছেনা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অপারেশন বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার ঢাকা শহরে অনেকগুলো স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ, মানিক মিয়া এভেন্যু থাকলেও, কেবল বছরে ১/২ দিন সেনাবাহিনীর ‘প্যারেড’ করার জন্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে পুরণো বিমানবন্দরের পুরো বিমানবন্দরটি ‘প্যারেড স্কোয়ার’ নামে। অথচ ঢাকা শহরে রাতে কয়েক লাখ লোক ঘর-বাড়ি না থাকার কারণে রাস্তায় ঘুমায়। আমাদের বিবেক বোধ জাগ্রত থাকলে এবং অপচয়কারী না হলে, পুরণো এয়ারপোর্টের ভেতর দিয়ে আমরা গাড়ি চলাচলের জন্যে একটি সার্কুলার সড়কসহ ৪/৫টি রাস্তা বানাতাম, যাতে ঢাকা শহরের যানজট নামক ‘দৈত্য’টিকে কিছুটা হলেও কাবু করা যেত। ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বিধায় যুদ্ধকালীন বা জরুরী অবস্থার সময় ঐ রাস্তাগুলো বন্ধ রাখা যেত। এ দেশের মানুষের জন্যে বানানো কোন ‘সংরক্ষিত এলাকা’ যদি এদেশের কল্যাণে না লাগে তাকে ‘সংরক্ষণ’ করে লাভ কি? ঢাকার একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের নাম হচ্ছে ‘তেজগঁাও বিমানবন্দর’। বর্তমানে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরটি চালু থাকলেও, সরকার আবার একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্যে মনে হয় ‘আদা-জল খেয়ে’ নেমেছে। কোটি কোটি বাস্ত্তহারা ও ভূমিহীন মানুষের এদেশে আরো হাজার হাজার মানুষকে ভিটেছাড়া করে আরেকটি নতুন বিমানবন্দর এখনই না বানালে দেশের কি খুব ক্ষতি হবে এবং বানালে কি তেমন উপকার হবে দেশের মানুষ ঠিক বুঝতে পারছে না। আমরা কি আমাদের মেজরিটি গরিবদের কথা চিন্তা করবো না? আরেকটি অপচয়ের চিত্র হচ্ছে আমারদের ‘ঈদগাহ গুলো’। বছরে ২-দিন ঈদের নামাজ আদায় করার জন্যে দেশের সর্বত্র কয়েক লাখ ‘ঈদগাহ’। সবচেয়ে মজার ও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ইসলামের মূল জন্মভূমি মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে এমনকি খোদ সৌদি আরবের কোন এলাকায়ই, এমনকি মক্কা বা মদীনায় কোন ‘ঈদের মাঠ’ নেই। মহানবী (স.) এর আমলেও কোথাও মাঠে ঈদের নামাজ পড়া হয়েছে বলে কোথাও উলেস্নখ নেই। সেখানের সকল মানুষ ফজরের নামাজ শেষেই মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে। যদিও জমি বা স্থানের সংকট আরবে নেই। কিন্তু আমাদের দেশে জমির মারাত্মক স্বল্পতা থাকা সত্বেও, এদেশে কিভাবে ঈদের মাঠ এলো তা কিন্তু গবেষণার বিষয়! চিন্তাশীল ও দেশপ্রেমিক মুসলমানদের ভেবে দেখতে হবে, বছরে ২দিন আমরা সংরক্ষিত ঈদের মাঠে নামাজ না পড়ে স্টেডিয়াম বা নিকটবর্তী স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বা খেলার মাঠে নামাজ পড়লে দেশ বা জাতির কি কোন ক্ষতি হবে? আবার খেলার জন্য আলাদা স্টেডিয়াম না বানিয়ে ঈদগাহকে বিকল্প মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তাও চিন্তার দাবী রাখে। আর হ্যা, ঈদের মাঠগুলো আমরা রাখতেও পারি, সেক্ষেত্রে বছরে ২-দিন ঈদের নামাজ পড়া ছাড়াও এই মাঠগুলোকে আমরা অন্য ধর্মীয়, খেলাধুলা ও সামাজিক কাজেও লাগাতে পারি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিতে পারি। খেলাধুলা বা শাকসবজি উৎপাদনের মত কাজে ব্যবহার করতে পারি। একই কথা টঙ্গীর ‘বিশ্ব ইজতিমা মাঠের’ জন্যও চিমতা করা অত্যাবশ্যক।

আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিবহণ বিআরটিসি সুপ্রীম কোর্ট, সচিবালয় ইত্যাদি সংস্থায় অনেক বাস দিয়েছে কেবল সকালে ১-বার ও অফিস শেষে আরেকবার কর্মচারীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য। অন্য সময় সারাদিন-রাত বাসগুলো বেকার দাঁড়িয়ে থাকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কিংবা সচিবালয় গেটে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রহর গুণছে কখন বাস আসবে? এই বাসগুলো কি কেবল ২-বার আসা-যাওয়ার জন্য আমদানী করা হয়েছে? বিআরটিসির বর্ণিত বিভিন্ন সংস্থায় প্রদত্ত বাসগুলো কেবল সকাল-বিকেল ২-বেলা সংস্থার যাত্রী পরিবহণের কাজ শেষে সাধারণের জন্য রাস্তায় চলে আসতে পারে এবং একই ভাবে সরকারি ও আধাসরকারি সংস্থার নিজস্ব কেনা বাস দিয়েও অলস সময়ে যাত্রী পরিবহণ করে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারে, যেগুলো কেবল ২-বেলা সরকারি প্রতিষ্ঠানের জনবলকে পরিবহণ করে বাকি সময় বসে থাকে।

সরকারি প্রায় সকল দফতর এখন ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার ব্যবহার করে। কিন্তু অধিকাংশ অফিস অত্যমত দামী কম্পিউটারকে কেবল ‘টাইপ-মেশিন’ হিসেবে ব্যবহার করে ফাইলিং ইত্যাদি চালাচ্ছে সেকেলে পদ্ধতিতে, যাতে সময় অপচয় ছাড়াও দুর্নীতি চালানো যায় সহজ পদ্ধতিতে। দেশের সর্বত্র এখন ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা চালু থাকলেও, মারাত্মক অপচয়মূলকভাবে আমাদের হাজার হাজার প্রাত্যহিক সরকারি ‘গেজেট’, হাইকোর্টের প্রাত্যহিক ৫০০/৬০০ পৃষ্ঠার ‘কজলিস্ট’ বা সূচিপত্র, সংসদের কার্যবিবরণীসহ নানাবিধ সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি ইত্যাদির হাজার হাজার বই বিজি প্রেসে ছাপা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। আবার প্রতিটি সরকারি ফাইল-পত্রের সঙ্গে ‘সংযুক্তি’ হিসেবে নানাবিধ কাগজপত্রের ফটোকপি দেয়ার ‘রেওয়াজ’ প্রচলিত এদেশে, যেগুলো আগেই সংশিস্নষ্ট ফাইলে রক্ষিত ছিল। এভাবে প্রতিটি ফাইল একই কাগজের একাধিক কাগজের ভারে ভারাক্রামত প্রায় সকল অফিসে। যেমন একজন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের ‘এমপিও’ করার জন্য সংশিস্নষ্ট শিক্ষকের নিয়োগ-যোগদানপত্র ছাড়াও, ঐ স্কুলের যায়গা-জমি, মাঠ-গাছ, পিওন-দপ্তরী ইত্যাদির নানাবিধ বর্ণনা দিতে হয় প্রায় ৩২ পৃষ্ঠার ৪-সেট। যা আগে থেকেই শিক্ষা দপ্তরে সংরক্ষিত ছিল।

প্রত্যহ লক্ষ ক্ষ লোক এদেশে চায়ের দোকানে অপচয়মূলক গালগল্প করে সময় কাটায়, আবার হাজার হাজার মানুষ বিনা কাজে দেশের একপ্রামত থেকে অন্য প্রামেত বাস-ট্রেনে ঘুরে ঘুরে যথার্থ কাজের লোকের যাতায়াতে বিঘ্ন ও রাষ্ট্রীয় অপচয় বাড়ায়। রাস্তা, ব্রিজ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদ্বোধনের নামে সময় ছাড়াও কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় ঘটে। ফিতা কেটে প্রধানমন্ত্রী বা কোন মন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠান উদ্বোধনের প্রস্ত্ততি শুরু হয় মূল অনুষ্ঠানের অমতত ২-মাস আগে এবং তাতে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের নানা পর্যায়ের জনবলের নানাবিধ মিটিংয়ে সময় ঘণ্টা ছাড়াও পানির মত অর্থ খরচ হয়। আমর্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের জন্য প্রায় ৪০-লাখ টাকা খরচ ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর ঢোকার জন্য বিশাল একটি দেয়াল ভেঙে ফেলতে হয় এবং অনুষ্ঠানে শেষে ঐ দেয়ালটি আবার বানাতে হয় ‘তাৎক্ষণিক টেন্ডারের’ মাধ্যমে। এদেশেই চৈত্রমাসের গরমেও উকিল ও বড়কর্তাদের কোর্ট-টাই পড়ে অফিস-কাচারীতে এসে, এসি চালিয়ে রেখে নিজেদের ‘গরম পোশাক’কে ঠান্ডা করতে হয়। সম্ভবত বাংলাদেশের মত গরিব রাষ্ট্রেই কোরবানীর সময় ছোট দুম্বা, ভেড়া, ছাগলের পরিবর্তে বিশালকৃতির লাখ টাকার ষঁাড় দিয়ে কোরবানীর প্রতিযোগিতা(?) দেখে ধনকুবের সৌদিরাও বিস্মিত হয়! এদেশে ড্রাইভাররাই বাম-লেন বন্ধসহ সকল ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে, রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে নিজ ও পাবলিকের সময়ের মারাত্মক অপচয় করে। শিক্ষাক্ষেত্রে ‘আধুনিক গেস্নাবাল’ ভাষাদক্ষ নাপিত, কুক, রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী, মোবাইল টেকনিশিয়ান তৈরীর বদলে, নানাবিধ অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে লক্ষ ক্ষ ‘উচ্চ শিক্ষিত বেকার’ তৈরী করে রাষ্ট্র ও পরিবারের বোঝা তথা দেশের জন্য মারাত্মক অপচয় করা হয়, যারা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ হয়ে সাধারণ কৃষক বা জেলের সমতান হয়েও পরবর্তীতে হয়ে যায়, ‘সংস্কৃতি’ কিংবা ‘দর্শনশাস্ত্রে’ টেনেটুনে পাস করা বেকার ‘এমএ’।

এদেশের সংসদভবন, রমনা, সোহরাওয়ার্দী, চন্দ্রিমা, প্যারেড স্কোয়ার ও সরকারি পার্কসহ নানাবিধ জমিতেই লাগানো হয় আম, জাম, লিচু, নারিকেল, তাল ইত্যাদি ফলবান বৃক্ষের বদলে, নানাবিধ ‘অফলবান’ অজানা দেশী-বিদেশী গাছ-গাছালী। আর অপুষ্টির এদেশে ফল আমদানী করতে হয় ভারত-ভুটান-অস্ট্রেলিয়া তথা বিদেশ থেকে। অর্থের অভাবে মেঘনা-পদ্মায় সেতু না বানাতে পারলেও, এদেশের ‘হাতিরঝিল’ প্রকল্পে কেবল সৌন্দর্যের জন্য ৪-৫টি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ বানানো হয় কোটি কোটি টাকা খরচে। বর্তমান সরকারি অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারকে এতো বেশী ‘বিলাসবহুল ও অপচয়মূলক’ বানানো হয় যে, আমেরিকানরা দেখলেও হয়তো লজ্জা পাবে, যা দেখা যাবে নবনির্মিত সরকারি ভবনগুলোতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ৪-লেন করতে গিয়ে যে জমি ও জমি ভরাটের খরচ করতে হয়েছে, তার চেয়ে কম খরচে কি ঢাকা-চট্টগ্রামে রেললাইন ডবল করে প্রতি ঘন্টায় দ্রম্নতগামী ট্রেন চালালে সাশ্রয়ী হতো না? ডবল রেলপথ নির্মাণে কোন লাইনেই আর নতুন করে জমি দখলের প্রয়োজন নেই বাংলাদেশে। প্রতি বছর এদেশে বিশ্ব ইজতিমায় এসে লক্ষ ক্ষ মানুষ ৩-দিনে ‘সুন্দরতম’ বয়ান শুনে ঘরে ফিরেই পুন. নিমজ্জিত হয় মারাত্মক দুর্নীতিতে, যা এ জাতির সময়ের ব্যাঙ্গাত্মক ও ধর্মীয় মর্ম বাণীর চরমতম জঘন্য অপচয় নয় কি? 

হরতাল ডেকে এদেশের উৎপাদন ব্যহত ও মানুষকে কষ্ট দেয়া রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রম্নতি আর দেশেপ্রেমের অপচয়। ভেজাল দিয়ে ও খাইয়ে জাতির স্বাস্থ্যজনিত অপচয় এবং বাণিজ্যিক ডাক্তার কর্তৃক নানা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও কোম্পানীর স্বার্থে নানাবিধ ঔষধ লিখে রোগী তথা জাতির সাথে প্রতারণামূলক অপচয় করা হচ্ছে। অনেক ওএসডি সরকারি কর্মকর্তাকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়ে রাষ্ট্রীয় অপচয় যেমন হচ্ছে, তেমনি গরিব দেশের সেনাসদস্যদের ঢাকার যানজট নিরসন কিংবা দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজে না লাগিয়ে কি অপচয় বাড়ানো হচ্ছে না? রাজনীতির নামে রাস্তায় রাস্তায় হাজারো গেট নির্মাণ আর শুভেচ্ছার নামে পোস্টার-ব্যানারে ঘটনো হচ্ছে ভয়াবহ অপচয়। সরকারি বিভিন্ন আকার আয়তনের ফরম বিভিন্ন সাইজ আর অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা লিখে ও বানিয়ে করা হচ্ছে কাগজের অপচয়। ব্যাংকের একটি জমা সিস্নপ ছোট আকৃতির হলেও, ব্যাংকে আয়কর জমাদের ফরমটি হচ্ছে একটি বিশালাকৃতির ‘লিগ্যাল’ সাইজ কাগজের, যা দিয়ে কমপক্ষে ৫-টি জমাসিস্নপ বানানো যায়। 
                                   
এভাবে বিশ্বের এ গরিবতর দেশটি রাষ্ট্রীয় পরিচর্যার মাধ্যমে অপচয়কে লালন করছে সমাজের সর্বত্র, যে কারণে জাতিটি হয়ে উঠছে মারাত্মক একটি অপচয়কারী জাতি হিসেবে। ইসলামে ‘অপচয়’কে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে, অপচয়ের জন্যে পরকালে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তাই আসুন, সব ধরণের অপচয়ের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হই ও প্রচার প্রচারণা চালাই এবং জনবিষ্ফোরণের এই ছোট্ট মাতৃভূমিকে রক্ষা করি। না হলে প্রতিযোগিতামূলক একুশ শতকের গেস্নাবাল বিশ্বে আমরা কিভাবে টিকে থাকবো? তাকি একদিকে জণবিস্ফোরণ, অপরদিকে আর্থিক দৈন্যতা, আর বিপরীতমুখী আমাদের সার্বিক অপচয়মূলক আর্থনীতিক কর্মকান্ড দিয়ে? এতে আমরা কেবল দুষ্টচক্রের মধ্যেই ঘুরতে থাকবো নিজেদের উদ্ধার করতে পারবো না কখনোই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন