শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মানুষের ইতিহাস : পাথর যুগ : ৬২

মানুষের ইতিহাস : পাথর যুগ

খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মানুষ প্রথম লিখন পদ্ধতি আবিস্কার করেছিল। সভ্যতার ক্রমবিকাশের অতিক্রম ধারাবাহিকতায় মানুষ প্রথমে বন্যদশা ও পরে বর্বরদশা অতিক্রম করতে হয়েছে। ঠিক এই সময় থেকে মানুষের সভ্যতার যুগ নির্দেশিত হয়েছে। তাই লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবনের পূর্বের সময়টিকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলে চিনহ্নিত করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে দুই থেকে তিন মিলিয়ন বছর আগের মানুষের জীবনচারণ সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায়। একেবারে বন্যদশা অতিক্রমের শেষ পর্বে এসে মানুষের প্রথম অগ্রগতির সময়কে পাথর যুগ বলা হয়। যেহেতু এই সময় মানুষের শ্রম এবং শিকারের প্রধান হাতিয়ার ছিল পাথর। এ সময়কার সঠিক ইতিহাস জানা পুরাপুরি সম্ভব নয়, কিছু কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ যেমন- ফসিল, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, হাতিয়ার, গুহাচিত্র ইত্যাদি ছাড়া পাথর যুগ সম্পর্কে জানার তেমন কোন উৎস নেই।

পাথর যুগকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে; পুরোপলীয় যুগ ( Old stone age) মধ্যপোলীয় যুগ ( Middle stone age) নবপোলীয় যুগ বা নব্য প্রস্তর যুগ ( New stone age) ।
 
সর্বসামগ্রিকভাবে পাথর যুগ প্রাগৈতিহাসিক যুগ হলেও এর পরে ক্রমে উদ্ভাবন ঘটে তামা, ব্রোঞ্জ ও লোহার। ঐতিহাসিক যুগে পদার্পণের পূর্বে এই সময়কালকে প্রায়-ঐতিহাসিক যুগ ( Protohistoric age) হিসাবেও অভিহিত করা হয়।
পুরোপলীয় যুগ ( Old stone age)

পুরোপলীয় যুগ ছিল প্রস্তর যুগের প্রাথমিক পর্যায়। এ সময় অন্যান্য সহজ দ্রব্যাদির পাশাপাশি মানুষ ব্যাপক অমার্জিত, স্থুল এবং অমসৃণ পাথুরে অস্ত্র ব্যাবহার করত বলে যুগটিকে এই রকম নাম করণ করা হয়েছে। পুরোপলীয় যুগ ছিল প্রস্তর যুগের দীর্ঘ স্থায়ী কাল। আফ্রিকায় প্রায় দশ লক্ষ পূর্বের ব্যাবহারকৃত পাথরের অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে। তাই দশ লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পনের লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে পুরোপলীয় যুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু প্রাচীনতম কাল পর্যন্ত যথেষ্ট ব্যবহারিত হাতিয়ার পাওয়া যায়নি বলে আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদেরা পুরোপলীয় যুগের সময়কালকে আরো সংক্ষিপ্ত করেছেন। সেই হিসাব অনুযায়ী এই যুগ পঞ্চাশ হাজার বছর থেকে পনের হাজার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

এ সময় জন মানুষের জীবন যাত্রার বিকাশের হার ছিল অত্যান্ত ধীর একটি প্রক্রিয়া। ফলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বিভিন্ন সময়েই বাধাগ্রস্থ হয়ে ছিল। তবে মানব সভ্যতা উন্নয়নের প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল পুরোপলীয় যুগেই। হোমিনিড গোষ্ঠী সর্ব প্রথম তুষার যুগেই তাঁদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রালোপিথেকাস গোষ্ঠী সর্ব পাথুরের অস্ত্র ব্যবহার করে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তুষার যুগে শিকারি মানুষের বৃহত্তর সময়কাল অতিবাহিত হয়েছে তেমন কোন উন্নতি ছাড়াই। পুরোপলীয় যুগের প্রথম পর্যায়ে ধীরে ধীরে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে নির্দিষ্ট আকৃতির অস্ত্র তৈরি করতে থাকে। আফ্রিকায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় একদল লোক পাথর ভাঙত এবং অন্যরা তা ঘোষে মেজে তা দিয়ে কুঠার তৈরি করতো। এই কুঠার শিকার এবং যুদ্ধে ব্যবহার করা হত।

তৃতীয় অন্তঃতুষার যুগে অর্থাৎ ৭০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইউরোপ ও পশ্চিম আফ্রিকায় নিয়ান্ডর্থাল মানবের বিচরণ ছিল।, এরা শীতল প্রকৃতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। প্রাকৃতিক কারনেই তাঁরা গুহাবাসী হতে বাধ্য হয় এবং পাথরের বড় চাইয়ের নিচে বসবাস শুরু করে। ক্রোমেনিয়ন মানব গোষ্ঠী শেষ পুরোপলীয় সংস্কৃতির মানুষ ছিল। এ সময় প্রাপ্ত হাড়ের সূচ প্রমাণ করে পোশাক সেলাইয়ের পদ্ধতিতে ও এ যুগে উদ্ভাবিত হয়েছিল। মাছ শিকারের জন্য তাঁরা হার্পুন ও তীর সাদৃশ্য অস্ত্র ব্যবহার করতে তারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। পুরোপলীয় যুগের শেষ ধাপের উন্নয়ন হচ্ছে চিত্রাঙ্কনের উন্নয়ন। এ সময়ের গুহা চিত্র অনেক বেশি বৈচিত্র্য বহন করে। চিত্রের পাশাপাশি ক্রোমে ভাস্কর্য তৈরির প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। এ যুগের প্রাপ্ত নারী মূর্তি এরই প্রমাণ দেয়। গুহাতে অবস্থানকালে তাঁরা তাঁদের অস্ত্র আরো উন্নতর করে তুলেছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন