সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশি বাঙালি : জাতিটির ঘুরে দাঁড়ানোর একুশ শতকীয় ফতোয়া ! # ১২১

বাংলাদেশি বাঙালি : জাতিটির ঘুরে দাঁড়ানোর একুশ শতকীয় ফতোয়া ! 
বাংলাদেশী বাঙালিরা এখন আক্রান্ত নানা অসুখে! রোগ নামক ‘অসুখ’টি ছাড়াও বাঙালি এখন চরমভাবে আক্রান্ত মারাত্মক জনদুষণে। আক্রান্ত শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, যাতায়াত, সন্ত্রাস, বেকারত্ব, আধ্যাত্মবাদ, ধর্মীয় হানাহানি (একে অপরকে ঘৃণা : নাস্তিক ভার্সাস আস্তিক) কুসংস্কার আর দুর্নীতিসহ নানাবিধ চেনা পরিচিত রোগে! জীবনের প্রায় সকল খাতেই বাঙালি এখন অপ্রাপ্তির অসুখে ভুগছে। এটি কেবল ক্ষয়িষ্ণু, প্রান্তিক বা সর্বহারা শ্রেণির বাঙালির মধ্যেই নয়, কম্পিউটার ভাইরাসের মত সব শ্রেণির বাঙালির মধ্যেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি নানা অনুসঙ্গে। এ থেকে জাতিটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা এখনই করা না গেলে, তার সামনে হয়েতো অপেক্ষা করছে কঠিনতর ভয়াবহ সময়! এ জাতির ক্ষুদ্র অংশ বা একক হিসেবে উঠে দাঁড়ানোর কয়েকটি প্রস্তাবনার কথা বলে হচ্ছে অনারম্ভর আর সুষ্পষ্টভাবে জাতির নীতি নির্ধারকগণের অবগতির জন্যে।

একটি জাতিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে তার যুৎসই শিক্ষা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়েই ক্ষমতাসীন সরকারগুলো শিক্ষার ব্যাপারে ‘চটকদার’ সব কথাবার্তা বললেও, পাকিস্তান আমল থেকে চলমান ‘বেকার তৈরীর’ শিক্ষা ব্যবস্থাই এদেশে এখনো বিদ্যমান প্রায় একই অবয়বে। বর্তমান জনপ্রত্যাশিত সেকুলার আওয়ামী লীগ সরকার ‘নতুন শিক্ষানীতি’র কথা শোনালেও, এই শিক্ষানীতিও একই পদ্ধতির ‘উচ্চ শিক্ষিত বেকার তৈরীর কারখানা’ বৈ আর কিছুই নয়। দেশের প্রায় সকল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা অকর্মন্য লাখ লাখ বেকার তৈরী করছে প্রতিনিয়ত, এ ক্ষেত্রে যদিও শীর্ষে দেশের ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ ও বাউবি। দেশের কোটি কোটি বেকারের জীবন পাল্টে দিতে পারে আধুনিক যুগ উপযোগী শিক্ষা ধারা। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ‘ভাষা জানা’ দক্ষ টেকনোলজিক্যাল জনগোষ্ঠীর। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা শিক্ষিত লক্ষ-কোটি বেকার জনগোষ্ঠিকে দক্ষ পেশায় বিদেশে পাঠাতে পারলে অনেকগুলো লাভ আমাদের। প্রথমত দেশের উপর বেকারত্বের চাপ কমবে, যার সঙ্গে জড়িত দেশের হাজারো কথিত অকথিত সমস্যা। দ্বিতীয়ত প্রবাসে গিয়ে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবে এরা এবং ঐ সকল দেশে আত্মীয় স্বজনের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবে পরবর্তীতে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে ইংরেজি জানা প্রচুর ‘সেফ’ (বাবুর্চী) যেমনি দরকার, তেমনি জার্মান ভাষা জানা ‘বার্বার’ (নাপিত) প্রয়োজন জার্মানীতে। 

ক্যানাডায় ফ্রেঞ্চ বা ইংরেজি জানা ‘নার্স’রা চাকুরী নিয়ে যেতে পারে অতি সহজে উচ্চ বেতনে। বিশ্বের চাকুরীর এ লোভনীয় বাজারটি ধরার জন্যে আমাদের বিদেশ গমনেচ্ছু বেকার তরম্নণ-তরুণীদের জন্যে স্থাপন করতে হবে বিশ্বের চাহিদা মোতাবেক নানাবিধ (সপ্তপদী) ‘টেকনিক্যাল ট্রেডের ট্রেনিং স্কুল’। যেখানে সেখানো হবে ‘চুলকাটা থেকে পাচক বিদ্যা’সহ বিশ্বের চাহিদামত হাজারো বিষয়ের ডিপ্লোমা কোর্স। একই সাথে ডিপ্লোমা এবং বিবিধ ভাষা শিখে দক্ষতা অর্জনের পর বেকাররা যাবেন বিদেশে সরকারি উদ্যোগে নিজের অর্থে কিংবা সরকারী ঋণে। একজন দক্ষতাসম্পন্ন প্রবাসী একজন অদক্ষ শ্রমিকের তুলনায় ২০-গুণ আয় করতে পারে সহজেই। এভাবে বছরে কয়েক লাখ ‘দক্ষ’ লোককে ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে পারলে, সঙ্গত কারণেই দেশের উপর চাপ কমবে খাদ্য, বাসস্থান, যাতায়াত, স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ের। রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমবে দেশে।

এর পরের বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে শিশুরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে, তারা যেন তাদের পাঠ শেষ করে দেশের জন্যে আর নতুন বেকারের বোঝা ভারী করতে না পারে, সেজন্যে বর্তমান প্রচলিত ‘সার্টিফিকেট সর্বস্ব’ তথাকথিত ‘উচ্চ শিক্ষা’র পরিবর্তে, দেশের চাহিদা নিরুপণ করে নানাবিধ জীবনধর্মী বিষয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রিক শিক্ষা ধারার প্রবর্তন করতে হবে ১-৩ বছর মেয়াদী। প্রচলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়-মাদ্রাসাগুলো ‘মাধ্যমিক টেকনিক্যাল স্কুলে’ রূপান্তর করা যেতে পারে সরকারের ইচ্ছে এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে। ইংরেজি ভাষার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও ইচ্ছেনুসারে আরবি, ফ্রেঞ্চ, জাপানীজ, জার্মান, ইটালিয়ান, কোরীয় প্রভৃতি ভাষাও যাতে দক্ষতার সাথে জীবন ভিত্তিকভাবে শিখতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে বর্ণিত দেশের দূতাবাস গুলোর সহযোগিতায়। 

কেবল ১০% উচ্চ মেধাবী নাগরিকের জন্যে খোলা থাকবে উচ্চ শিক্ষার বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের দরজা দেশের প্রয়োজনে। ৯০% নাগরিক হবে দক্ষতা সম্পন্ন মধ্যমানের ডিপ্লোমাধারী ‘টেকনোলোজিস্ট’। এরা কেউ গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মী, কৃষি ফলন বৃদ্ধিকারী, জলসম্পদ আহরণকারী, চুলকাটার, এয়ারক্রাফট মেরামতকারী, জাহাজ নির্মাণ টেকনিশিয়ান, প্লাম্বার, মেশন, ওয়েল্ডার, শপ কিপার, ফটোকপিয়ার মেরামতকারী এ জাতীয় হাজারো আধুনিক পেশার ডিপ্লোমাধারী হবে দেশ ও বিদেশের জন্যে। যারা বিদেশী ভাষা পরীক্ষায় দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হবে, তাদের চাকুরীর বাজার কেবল দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, আর বিদেশী ভাষা দক্ষদের চাকুরী উন্মুক্ত থাকবে দেশ ও বিদেশের বাজারের জন্যে। বর্তমান প্রচলিত ৮-১০ বিষয়ের সেকেলে বিদ্যার পরিবর্তে আধুনিক জীবনধর্মী বর্ণিত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে জাতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে দেশে এবং গ্লোবাল বিশ্বের সর্বত্রই এবং কয়েক বছরের ভেতরেই।

বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে। ঢাকার প্রায় রাস্তায়ই এখন মানুষের জন্যে চলা দায়; তা রিক্সা, গাড়ি, বাসে কিংবা হেঁটে হলেও। ফুটপাতগুলো চলমান মানুষে ঠাসা। রাষ্ট্রীয় কঠোর আইন তৈরী করা দরকার এখন এভাবে মানুষ বাড়ানোর বিপক্ষে। প্রথমত সরকারি চাকুরেদের দিয়ে শুরু হতে পারে এ আইন, যেহেতু তারা প্রজাতন্ত্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী। কেবল একটি সন্তানের কর্মচারীকে সরকার প্রণোদনামূলক ইনক্রিমেন্ট, পদায়নে অগ্রাধিকার, রাষ্ট্রীয় সেবায় অগ্রাধিকার, একক সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্র পরিবারটিকে উৎসাহিত করতে পারে জীবনের চলমান সকল ক্ষেত্রে। বিপরীত দিকে একাধিক সন্তানের কর্মচারীকে রাষ্ট্র সন্তানের সংখ্যা হিসেবে সুযোগ সুবিধা বন্ধ বা কর্তন করে, ট্যাক্স আরোপ করে, রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত করে নতুনভাবে একাধিক সন্তান নেয়াকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো রাষ্ট্রের অন্যান্য নাগরিক পরিবারের প্রতিও রাষ্ট্র একই পদ্ধতিতে পুরস্কার, তিরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করে সমাজে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করতে পারে ক্রমান্বয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে ভয়াবহ আকারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও, বর্তমানে এ ব্যাপারে রাষ্ট্র বা সরকার বলতে গেলে একদম নিষ্ক্রিয় (সম্ভবত ক্ষমতায় থাকতে + ক্ষমতায় যেতে)। যে কারণে এ সমাজেরই সচেতন ১-সন্তানধারী এটি পরিবারের পাশেই, অপর ১টি পরিবার ১০টি সন্তান ধারণ করে, রাষ্ট্রীয় সীমিত সম্পদের উপর ভাগ বসিয়ে ১-সন্তানধারী পরিবারটিকে তার রাষ্ট্রীয় নানাবিধ সুবিধাদি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে, যা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্যে কাঙ্খিত হতে পারে না।

সীমিত সম্পদের এ দেশে রাষ্ট্রীয় নানাবিধ অপচয় যে কোন ভাবে রোধ করতে হবে। কেবল ঢাকা শহরেই নির্মাণ করা হয়েছে অনেকগুলো স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, প্যারেড স্কোয়ার, বিশ্ব ইজতিমা মাঠ ইত্যাদি, যা অনেক সময়ই খালি পড়ে থাকে। শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র, ওসমানী মিলনায়তন ছাড়াও নানাবিধ অডিটরিয়াম, মিলনায়তনের পরিবর্তে একটি-দুটো সম্মেলন কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে নানাবিধ অনুষ্ঠান হতে পারে। যেমন প্রস্তাবিত হাতিরঝিল প্রকল্পকে ‘ইকোনমিক’ প্রকল্প বানিয়ে অনেক অর্থ সাশ্রয় করা যেত, যদি প্রকল্পে অনেকগুলো ব্রিজ বানানোর পরিবর্তে, তেজগাঁ থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সোজা গভীর একটি ‘ক্যানেল’ বানিয়ে তার ২-তীরে দ্বিমুখী রাস্তা ও আশে পাশের সকল জমি অন্য কাজে কিংবা ‘ওপেন নিলামে’ বিক্রি করে দেয়া হতো। প্রকল্পের পাশের জমি বিক্রির ঐ টাকা দিয়েই এই ‘ক্যানেল কাম রাস্তা’ বানানো যেত সহজেই, সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষের প্রয়োজন পড়তো না। ব্যাংককের মতো ঐ ক্যানেলে উচ্চ গতির জলযান চলাচল করতে পারতো কিন্তু তা না করে বিশ্বের একটি অত্যন্ত গরিব দেশে বিলাসী একটি অপচয়মূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ৫-৭টি ব্রিজের সমাহারে সরকার তথা জাতির কোটি কোটি টাকার সংশ্লেষ ঘটানো হয়েছে। এরূপ অপচয়মূলক প্রকল্পের বদলে অর্থ সাশ্রয়ী অথচ জীবনধর্মী প্রকল্প গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়, অন্তত এ গরিব দেশটির জন্যে।
একইভাবে নতুন বিমানবন্দর বানাতে হলে, পুরণো বিমান বন্দরের যায়গাকে (তেজগাঁ ও কুর্মিটোলা) কিভাবে দেশের জনসম্পৃক্ত কাজে লাগানো যায় (শুধু বছরে একবার প্যারেড করার জন্যে প্যারেড স্কোয়ার না বানিয়ে) তার আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক এ জন্যে যে, দেশে জমির পরিমাণ প্রকৃতপক্ষেই সীমিত। একইভাবে ‘‘বঙ্গভবন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’’ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত বিধায়, এই ৩টি বর্ণিত ভবনকে একই ভবনে আনার চিন্তা করতে হবে এবং চিন্তা করলে এটি আনা বোধ হয় তেমন কোন কঠিন কাজ নয়, কেবল সদিচ্ছা ছাড়া। কেবল এই ৩টি ভবনের কাজ একটি ভবনে করলে বছরে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় ছাড়াও সময়ও বাঁচবে অনেক।  
      
সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ রক্ষার জন্যে ঢাকা শহরের রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিমানবন্দর সড়ক, সংসদভবনসহ সরকারী বিভিন্নস্থানে যে সকল গাছ লাগানো হয়েছে ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে, তার অধিকাংশ গাছের উপকারিতা ও নাম আমার মতো অনেকেই জানে না। সংসদ ভবনের সামনে কিছু ‘গেজুর গাছ’ লাগানো হয়েছে কেন এবং কার পরামর্শে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, কারণ বাংলাদেশের ‘খেজুর’ নামক ফলটি ‘ফল’ হিসেবে আমাদের লজ্জাই হয়তো দেবে বিদেশীদের সামনে। এই সকল গাছের পরিবর্তে যদি বর্ণিত স্থানে এবং সড়ক দ্বীপগুলোতে উন্নত জাতের ‘আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, জাম, লিচু, রামভুটান, গাব, জাম্বুরা, কদবেল, কামরাঙা, চালতা, জামরুল, লেবু, তাল, সুপারী, লটকন, নারিকেল, কমলালেবু’ ইত্যাদি ফলের গাছ সারিবদ্ধ করে লাগানো হয়, তাহলে ফলসহ গাছগুলো দেখতে বর্তমানে লাগানো ফলহীন ‘অগাছের’ তুলনায় মনে হয় ‘অসুন্দর’ লাগবে না। এতে দু’টো উপকার হবে। বর্ণিত প্রস্তাবমত লাগানো গাছে উৎপাদিত ফলে অন্তত ঢাকা শহরের ফলের চাহিদা মিটবে এবং ফল গাছের কাঠও অন্যান্য গাছের কাঠের মতই কাজে লাগানো যাবে। যেমন কাঁঠাল বা লিচু গাছের কাঠ কোন অংশেই মূল্যহীন নয়। জাম বা গাব গাছের ফল ছাড়াও কাঠ খুবই মূল্যবান, অন্তত ফলহীন ‘বন্ধ্যা’ বর্তমানে শোভিত ‘রেন্ট্রি’ বা ‘মেহগিনি’ গাছের তুলনায়। চন্দ্রিমা উদ্যানে ‘ফালতু’ গাছের পরিবর্তে ‘কাজী পেয়ারা’ লাগানো হলে, ঢাকার মানুষ সারা বছর তাজা পেয়ারা খেতে পারবে। সংসদ ভবনের সামনে বিদেশী ‘সাইকাস’ বা পাম শ্রেণির ‘অগাছ’ গুলোর বদলে আমাদের তাল, সুপারী বা নারীকেল বিথি থাকলে তা দেখতে কি অসুন্দর হতো? বরং আমরা সেখান থেকে প্রচুর তাল, নারিকেল বা সুপারী পেতাম অন্তত ‘লিজের’ মাধ্যমে হলেও বাংলাদেশ পেতো।

এভাবে নানা পর্যায়ে সুচিন্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আশা করতে পারি জাতিটি হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অবশ্যই। তা না করে আমরা যদি প্রাচীন সব প্রচলিত পদ্ধতিতে আঁকড়ে ধরে নানা অপচয়মূলক কাজ অব্যাহতভাবে করতেই থাকি, ‘অগাছ’কে সরকারী জমিতে লালন করতে থাকি সার-পানি দিয়ে, প্রচলিত ‘বেকার উৎপাদক শিক্ষা ব্যবস্থা’ বহাল রেখেই নিজেদের আমলে গঠিত কমিটির পুরণো পদ্ধতিটিকে কেবল নাম পরিবর্তনের কারণে বগল বাজাতে থাকি, জনসংখ্যা অব্যাহতভাবে বিনা বাঁধায় বাড়তেই দিতে থাকি, লক্ষ-কোটি বেকারকে বিদেশে পাঠানোর দক্ষতা সম্পন্ন করার আধুনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে একবার সৌদি আরব, আরেকবার মালয়শিয়াকে কেবল ‘শ্রমিক’ নেয়ার অব্যাহত ‘অনুরোধ’ জানাতে থাকি, তাহলে আমাদের জীবনের অন্ধকার কাটবে তো না-ই, বরং সময়ের সাথে সাথে তা বাড়তেই থাকবে। সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে, বর্তমান সরকারসহ এ জাতির বিবেকমান সকল পেশার মানুষকে সকল সংকীর্ণতা ত্যাগ করে অবিলম্বে এগিয়ে আসতে হবে জাতিকে রক্ষার এ মহান ব্রতে। তা হলে হয়তো জাতিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অচিরেই। নতুবা অক্টোপাশের মত অষ্টপদী সমস্যার ঘুর্ণিবর্তে আমরা জড়িয়ে পড়বো দিনের পর দিন, যা থেকে উত্তোরণ আমাদের জন্যে আরো কঠিনতর হবে বহমান গতিশীল কালকে চ্যালেঞ্জ করে ! 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন