শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাঙালি : বিশ্বের গরিবতর জাতি কিন্তু ভয়াবহ অপচয়কারী ২ পর্বের লেখাটির ১ম পর্ব : ৬১

বাঙালি : বিশ্বের গরিবতর জাতি কিন্তু ভয়াবহ অপচয়কারী
২ পর্বের লেখাটির ১ম পর্ব

মাত্র ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার তথা ৫৬,৯৭৭ বর্গমাইলের ১৬-কোটিরও বেশী লোকে-লোকারণ্যের একটি লোকালয় - নাম বাংলাদেশ! দেশটির ইসলাম ৮৯.৭%, আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৯.২%, যার সঙ্গে অভাব-অনটন একই সূত্রে গাঁথা সেই ‘চর্যাপদে’র প্রাচীন কাল থেকেই। সেখানেও নানাবিধ অভাব আর কষ্টের কথা বর্ণিত হয়েছে চর্যার পাতায় পাতায়! উপর্যুক্ত দুটো ধর্মেই অপচয়কে ‘না’ বলতে সেখালেও আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয় ও ব্যক্তিপর্যায়ে মারাত্মক অপচয় আমরা প্রত্যক্ষ করি প্রত্যহ। যে কারণে এ দেশে কিছু মানুষ ভোগ বিলাসে জীবন যাপন করলেও, কোটি কোটি মানুষ তাদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত জন্মের পর থেকেই!

আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন নিয়ে আমরা সবাই গর্ব করি না জেনেই কিন্তু এ ভবনটিতে প্রকৃত ব্যবহার্য স্পেসের তুলনায় এতে কত বেশি লিফট, সিঁড়ি ও লবি বানিয়ে যায়গা নষ্ট করা হয়েছে, তা কি আমরা চিন্তা করেছি? এ ভবনটি বানাতে যে যায়গা নিয়েছে লুই-ক্যান, তাতে ঢাকা শহরের সকল সরকারি অফিস-আদালত নির্মাণ করা যেত। জমির স্বল্পতা এদেশে সবচেয়ে বেশী প্রকট। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশে ভূমিকেন্দ্রিক মোকদ্দার সংখ্যা মোট মামলার ৮৩%। মূলত ভূমির স্বল্পতাহেতু জমি নিয়ে এতো ঝগড়া-বিবাদ মামলা-মোকদ্দমা! এই জমি সংকটের এদেশে হাজার হাজার একর জমি কিভাবে আমরা অপচয় করছি, তার দু’য়েকটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো।

মারাত্মক ঘনবসতির ঢাকা শহরে স্টেডিয়াম কমপক্ষে ৫টি (বঙ্গবন্ধু, মীরপুর, সায়েদাবাদ, ফতুল্লা ও আর্মি)। প্যারেড স্কোয়ার, মাঠসহ কতো জমি নষ্ট করছি ভিন্ন ভিন্ন অযুহাত ও কাজে তার হিসেবে কে করবে? শিল্পকলা একাডেমি, মহিলা সমিতি, গার্ল গাইড, ওসমানী, মহানগরী নাট্যমঞ্চ, টিএসসি, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রসহ প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করে রাখা হয়েছে নানা আকার আয়তনের মঞ্চ/অডিটরিয়াম। অথচ কেন্দ্রীয়ভাবে ২-৩টি অডিটরিয়াম/মঞ্চ দিয়েই অভাবী দেশের পর্যায়ক্রমিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তেজগাঁ কিন্তু তার বাসভবন আসাদগেট, আবার রাষ্ট্রপতির দপ্তর গুলিস্তান। সরকারি পর্যায়ে সারা দেশের কথা বাদই দিলাম, কেবল ঢাকা শহরেই নানা আকৃতি-প্রকৃতি আর আয়তনের ছোট বড় সরকারি অফিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শহরের সর্বত্র। কোনটি পুরণো ঢাকায়, আবার কোনটি মতিঝিল, কোনটি আগারগাঁয়ে, আবার কোনটি উত্তরায়। কোনটি একতলা, আবার অন্যটি বহুতল বিশিষ্ট। হিসেব করলে দেখা যাবে, সরকারি বর্ণিত অফিসগুলোর জন্যে যে জমি নষ্ট হচ্ছে, তা ঢাকা শহরের যে কোন স্থানে বহুতল বিশিষ্ট একটি বিশাল ভবন নির্মাণ করলে তাতেই স্থান সংকুলান সম্ভব। অথচ শহরের নানা স্থানে বিক্ষিপ্ত ও নানাভাবে অফিস ধরে রেখে সময়, অর্থ ও জমির অপচয় করা হচ্ছে যুগের পর যুগ।

বিদ্যুৎ স্বল্পতা সত্বেও আমরা কিভাবে তা অপচয় করছি তা সরকারি অফিসগুলো পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে, সেখানে কর্মকর্তা কর্মচারী না থাকলেও, অনেক সময় খালি রুমে ঘুরতে থাকে ফ্যান বা চলতে থাকে এসি। সরকারি অফিস বাদ দিলেও ‘সুপার মল’ বা ‘পেট্রোল পাম্প’গুলোতে উৎসবের মত লাইটিং দেখে বোঝার উপায় নেই, বিদ্যুতের কারণে অনেক কৃষক তাদের জমিতে ঠিকমত সেচ দিতে পারছেনা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অপারেশন বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার ঢাকা শহরে অনেকগুলো স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ, মানিক মিয়া এভেন্যু থাকলেও, কেবল বছরে ১/২ দিন সেনাবাহিনীর ‘প্যারেড’ করার জন্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে পুরণো বিমানবন্দরের পুরো বিমানবন্দরটি ‘প্যারেড স্কোয়ার’ নামে। অথচ ঢাকা শহরে রাতে কয়েক লাখ লোক ঘর-বাড়ি না থাকার কারণে রাস্তায় ঘুমায়। আমাদের বিবেক বোধ জাগ্রত থাকলে এবং অপচয়কারী না হলে, পুরণো এয়ারপোর্টের ভেতর দিয়ে আমরা গাড়ি চলাচলের জন্যে একটি সার্কুলার সড়কসহ ৪/৫টি রাস্তা বানাতাম, যাতে ঢাকা শহরের যানজট নামক ‘দৈত্য’টিকে কিছুটা হলেও কাবু করা যেত। ‘সংরক্ষিত এলাকা’ বিধায় যুদ্ধকালীন বা জরুরী অবস্থার সময় ঐ রাস্তাগুলো বন্ধ রাখা যেত। এ দেশের মানুষের জন্যে বানানো কোন ‘সংরক্ষিত এলাকা’ যদি এদেশের কল্যাণে না লাগে তাকে ‘সংরক্ষণ’ করে লাভ কি? ঢাকার একটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের নাম হচ্ছে ‘তেজগাঁও বিমানবন্দর’। বর্তমানে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরটি চালু থাকলেও, সরকার আবার একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্যে মনে হয় ‘আদা-জল খেয়ে’ নেমেছে। কোটি কোটি বাস্তুহারা ও ভূমিহীন মানুষের এদেশে আরো হাজার হাজার মানুষকে ভিটেছাড়া করে আরেকটি নতুন বিমানবন্দর এখনই না বানালে দেশের কি খুব ক্ষতি হবে এবং বানালে কি তেমন উপকার হবে দেশের মানুষ ঠিক বুঝতে পারছে না। আমরা কি আমাদের মেজরিটি গরিবদের কথা চিন্তা করবো না?

শেষ পর্ব পাবেন ঘন্টা খানেক পরেই। চোখ রাখুন--------------








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন